কলাবাগানে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান হত্যাকাণ্ডে এবার তাঁর আরেক সহভাড়াটে নূরজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নূরজাহানকে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নূরজাহান মাঝেমধ্যে সাবিরা রহমানের মেয়েকেও পড়াতেন। সাবিরা খুন হওয়ার সময়ও তিনি বাড়িতে ছিলেন।
গত ৩১ মে রাজধানীর কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে চিকিৎসক সাবিরার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত সাবিরার ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, চিকিৎসকের সহভাড়াটেসহ অন্তত ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে এখনো হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং কে বা কারা জড়িত, সেটি পুলিশ জানতে পারেনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে পরিচিতজনেরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে তাঁদের ধারণা।
গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান খুন হওয়ার পর কলাবাগান থানা–পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র্যাব ছায়া তদন্ত করছে। বাড়ির মালিক ও তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে তৃতীয় তলায় ভাড়া নেন সাবিরা রহমান। পরের মাসে তিনি কানিজ সুবর্ণা ও নুরজাহানের কাছে দুটি কক্ষ ভাড়া দেন। দুই সহভাড়াটের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া তুলতেন সাবিরা।
ঈদের আগে গোপালগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নূর জাহান। সাবিরা খুন হওয়ার সময়ও তিনি বাড়িতে ছিলেন। তবে ঘটনার সময় সাবিরার সঙ্গে বাসায় ছিলেন যশোরের মেয়ে মডেল কানিজ সুবর্ণা। থানা–পুলিশের পাশাপাশি কানিজ সুবর্ণাকে পিবিআইসহ অন্যান্য সংস্থাও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, যে বাসায় চিকিৎসক সাবিরা থাকতেন, সেই বাসায় নিচতলায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তারক্ষী রমজান দায়িত্ব পালন করেন। কানিজ সুবর্ণা দাবি করেছেন, সেদিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে দরজা বন্ধ করে তিনি প্রাতর্ভ্রমণে যান। এর তিন ঘণ্টা পর তিনি আবার ফিরে আসেন। তবে ঘরের বাইরে থেকে ভেতরে ধোঁয়া দেখতে পান। পরে তিনি ফায়ার সার্ভিস অফিসে যোগাযোগ করেন। নিরাপত্তারক্ষী ও পাশের বাড়ির এক নারীকে ডেকে আনেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দরজা খোলা হয় এবং তিনি তা ভিডিও করেন। সেই ভিডিও তিনি পুলিশকে দেখিয়েছেন।
তবে বাসার নিরাপত্তারক্ষী পুলিশের কাছে দাবি করেন, তিনি সুবর্ণার বাইরে যাওয়া বা ফিরে আসার কিছুই দেখেননি। যদিও নিরাপত্তারক্ষী সেদিন অন্য ফ্ল্যাটের লোকজনের নির্দেশে সকালেই দুবার বাজারে গিয়েছিলেন।
ডিএমপির নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে, সাবিরা সেদিন ভোররাতে খুন হয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, সাবিরা রহমানের মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) পর্যালোচনা করা হয়েছে। সর্বশেষ তিনি যাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য সব কারণ সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে।