মগবাজার বিস্ফোরণ

চার সংস্থার অসহযোগিতায় শেষ হচ্ছে না তদন্ত

গত বছরের ২৭ জুন ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়।

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণ
ফাইল ছবি

সাড়ে ছয় মাস পরও রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণের ওই ঘটনা নিয়ে ছয়টি সরকারি সংস্থা তদন্ত করেছে। এর মধ্যে চারটি সংস্থা সিটিটিসিকে সহযোগিতা করছে না। তারা তদন্ত শেষ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিলেও সিটিটিসিকে এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দেয়নি।

সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুই দফা চিঠি দিয়েও তিতাস, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, পেট্রোবাংলা ও এনার্জি রেগুলেটরির কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলার তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ চিঠি দেওয়ার পর দুই মাস পেরিয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু পুলিশ সদর দপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন সিটিটিসিকে সরবরাহ করা হয়েছে।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিস্ফোরণের পেছনে একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দায়ী নয়। ভবনটি ছিল ৬০ বছরের পুরোনো ও আবাসিক। ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনেই চলছিল বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এতে ভবন মালিকের গাফিলতি ছিল। নীতিমালা না মেনে জীর্ণ ভবনটিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘চিলার’ (ঘর ঠান্ডা রাখার যন্ত্র) ব্যবহার করছিল হিমায়িত মাংস বিক্রি করা একটি প্রতিষ্ঠান। তিনতলা ভবনটির নিচ দিয়ে তিতাসের একটি পরিত্যক্ত গ্যাসলাইন ছিল। তবে পরিত্যক্ত হলেও সেই লাইনে গ্যাস সরবরাহ হতো। ওই লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাস চিলার রুমে জমা হয়। কোনো কারণে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ (স্পার্ক) থেকে সেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

গত বছরের ২৭ জুন ওই বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। বেশ কয়েকটি ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায়। দুর্ঘটনার পর তিতাস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, ভবনটিতে কোনো গ্যাস–সংযোগ ছিল না। সেখানে গ্যাসের যে পাইপলাইন রয়েছে, সেটা সচল নয়। তবে সিটিটিসির তদন্তে উঠে এসেছে, সাত বছর আগে ওই বাড়ির অবৈধ গ্যাস–সংযোগ রাইজার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল তিতাস কর্তৃপক্ষ। তবে গ্যাসের সরবরাহ স্থায়ীভাবে বন্ধ করেনি। এতে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়। আর পাইপলাইনটিতে ছিদ্র ছিল।

এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ মোল্লাহর বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। পরে মুঠোফোনে খুদে বার্তাও পাঠানো হয়; কিন্তু সাড়া দেননি তিনি। তবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব (প্রশাসন ও আইন) আবু শাহেদ চৌধুরী বলেন, সিটিটিসির চিঠি তাঁরা পেয়েছেন কি না, সেটি নথি না দেখে বলতে পারবেন না।

সিটিটিসিকে তদন্ত প্রতিবেদন সরবরাহ না করার বিষয়ে পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সিটিটিসির কোনো চিঠি তাঁরা পাননি। একই দাবি করেছেন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদও।

মগবাজারের ওই বিস্ফোরণের পরের দিন গত বছরের ২৮ জুন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রমনা থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়ির মালিক, শর্মা হাউস, বেঙ্গল মিট, গ্র্যান্ড কনফেকশনারি, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকস, তিতাস গ্যাস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে কারও না কারও অবহেলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক মোদাচ্ছের কায়সার গতকাল বলেন, আগামী সপ্তাহে আবার ওই চারটি সংস্থাকে চিঠি দেবেন তাঁরা। চিঠিতে উল্লেখ করা হবে তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলার তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না। মোদাচ্ছের কায়সার বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছেন। তদন্ত–সংক্রান্ত অন্য কাজ গুছিয়ে এনেছেন।

কার অবহেলায় মগবাজারের বিস্ফোরণ, তদন্তে কী পাওয়া গেছে—জানতে চাইলে সিটিটিসির ওই পরিদর্শক বলেন, চারটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে তা পর্যালোচনা করা হবে। এরপর চূড়ান্তভাবে বলা যাবে কার গাফিলতি ছিল।