বিভিন্ন কোম্পানির অধীনে রাজধানীতে বাস চলার কারণেই চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পরিবহনমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির নেতারা। তাঁদের দাবি, অবৈধভাবে চলা এই চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ মালিক সমিতির হাতে নেই। পরিবহনে মালিকানার বিদ্যমান ব্যবস্থায় পরিবর্তন হলেই চাঁদাবাজি বন্ধ হবে বলে মনে করেন তাঁরা।
পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি নিয়ে রাজধানীর বাংলামোটরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য তুলে ধরেন মালিক সমিতির নেতারা।
এর আগে ১ অক্টোবর সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ নামের একটি সংগঠনের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, পরিবহন খাত থেকে মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর নেতৃত্বে প্রতিদিন ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার চাঁদা তোলা হয়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মালিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। এ সময় ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে প্রায় সাত হাজার বাস চলে।
>দিনে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার চাঁদা তোলার অভিযোগ
পরিবহনে মালিকানার বিদ্যমান ব্যবস্থায় পরিবর্তন হলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে
১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে
আইন কার্যকরে সরকারকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি
দিনে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগের বিষয়ে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনার কারণে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়। ‘গেটপাস বা ওয়েবিল’ নামে অবৈধভাবে এই চাঁদা তোলা হয়। বাস কোম্পানির ওপর সমিতির খুব একটা নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি বলেন, যেকোনো ব্যক্তি কোম্পানি খুলে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন (রুট পারমিট) নিতে পারেন। এরপর ওই কোম্পানি বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে বাস সংগ্রহ করে রাস্তায় নামায়। এরপর প্রতিটি বাসমালিকের কাছ থেকে কোম্পানির শীর্ষ ব্যক্তিরা চাঁদাবাজি করেন। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এই প্রথা ভেঙে ঢাকা ও এর আশপাশে চলাচলকারী সব বাস পাঁচটি কোম্পানির অধীনে চলাচলের উদ্যোগ নেন। এ ব্যবস্থা চালু হলে চাঁদাবাজি আর থাকবে না।
ঢাকার পরিবহন খাত থেকে দিনে কত টাকার চাঁদা ওঠে, জানতে চাইলে এনায়েত উল্যাহ দাবি করেন, সমিতি পরিচালনার জন্য অর্থ প্রয়োজন হয়। এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার (পরে আইজিপি) শহীদুল হকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মালিক সমিতির জন্য প্রতি যানবাহন থেকে দিনে ৪০ টাকা চাঁদা ঠিক করা হয়েছিল। সেটাই তাঁরা নেন।
১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, আইনে তাঁরা কিছু অসংগতি পেয়েছেন। এগুলো সংশোধন দরকার। কিন্তু সরকার চাইছে আগে কার্যকর করতে। পরে প্রয়োজন হলে সংশোধন করবে। এতে মালিক-শ্রমিকনেতারা একমত হয়েছেন। আইন কার্যকরে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান দাবি করেন, পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগের নামে এর আগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সংগঠনের মূল উদ্যোক্তা ইসমাইল হোসেন খুনের মামলার আসামি। তিনি ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় পরিবহনসহ আশপাশের দোকান থেকেও চাঁদা তুলতেন।
ইসমাইল হোসেন মালিক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মসিউর রহমান দাবি করেন, ১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ সময় পরিবহন খাতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে পরে যোগাযোগ করা হলে ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। এখন ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু হওয়ায় মুখ খোলার সাহস পেয়েছেন। যে কারণে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন।