চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম বলে ঢাকা ও শহরতলির সিএনজি স্টেশনগুলোতে চাপ কম থাকছে। স্টেশনে গ্যাসের চাপ থাকতে হয় কমপক্ষে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ারিংস—প্রতি বর্গইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট)। কিন্তু গত প্রায় এক সপ্তাহে তা ৯ পিএসআইয়ের নিচে নেমে এসেছে। এতে সিএনজিচালিত গাড়ি ও অটোরিকশাগুলো সমস্যায় পড়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রমতে, ঢাকাসহ তিতাস গ্যাস এলাকায় গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা থেকে তিতাসকে বর্তমানে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই বরাদ্দ থেকে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। এরই প্রভাব পড়ছে ঢাকা ও শহরতলিতে অবস্থিত প্রায় ১০০ সিএনজি স্টেশনে।
গত দুই দিন নগরীর বিভিন্ন সিএনজি স্টেশন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে গ্যাসের স্বল্পতা। বিশেষ করে সকাল নয়টার পর থেকে বেলা প্রায় দুইটা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকছে খুব কম। চাপ কম বলে বেশি সমস্যা হচ্ছে ছোট সিএনজি স্টেশনগুলোতে। কারণ, সেখানে গ্যাসের মজুত কম থাকে। লাইনও থাকে কম।
গতকাল শুক্রবার সাতরাস্তা, তেজগাঁও, মহাখালী এলাকায় সকাল নয়টার পর থেকেই গ্যাসের চাপ কম দেখা যায়। সাতরাস্তা এলাকায় মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক থেকে নেমেই হাতের বাঁয়ে পড়ে সিএনজি স্টেশন ‘অল ইন ওয়ান’। সেখানে গাড়িতে গ্যাস যাচ্ছে খুব কম, কিন্তু সময় নিচ্ছে বেশি। একজন লাইনম্যান জানালেন, গ্যাসের চাপ নেই। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী সিটি সিএনজি স্টেশন, শিল্পাঞ্চল থানার কাছে সততা এবং স্বাধীন বাংলা, শিকদার ফিলিং স্টেশনসহ বিভিন্ন স্টেশনে। গ্যাস পেতে দেরি হচ্ছে বলে এসব স্টেশনে গাড়ির ভিড়ও কম। আবার গ্যাসের চাপ কম হলেও শহীদ তাজউদ্দিন সরণিতে সাউদার্ন সিএনজি স্টেশনে অনেক গাড়ির ভিড় থাকছে। এটি এলাকায় সবচেয়ে বড় সিএনজি স্টেশন বলে এখানে গ্যাসের মজুত বেশি। যথেষ্ট ভিড় দেখা গেছে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল–সংলগ্ন মড়বাজার মোড়ে আনুদীপ সিএনজি স্টেশনে। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে স্টেশনে প্রচুর গাড়ির ভিড় দেখা যায়। কিছু গাড়ি লাইন ভেঙে উড়ালসড়কের মুখেও এসে ঠেকে।
অন্তত পাঁচটি সিএনজি স্টেশনের মালিকপক্ষ এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, স্বল্পচাপ সমস্যার জন্য তাঁদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। আবার গাড়িচালকদের কাছেও কথা শুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মনোরঞ্জন ভক্ত প্রথম আলোকে বলেন, সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ কমপক্ষে ১৫ পিএসআই থাকতে হয়। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়ই গ্যাস ১৫ পিএসআইয়ের নিচেই থাকে। বর্তমানে কোনো কোনো দিন আট পিএসআইয়ের নিচে নেমে আসে। বিষয়টি তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে জানানো হয়েছে।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির পরিচালক (অপারেশন) রানা আকবর হায়দারী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) একাধিক সঞ্চালন লাইনের কাজ চলায়ও গ্যাস সরবরাহে কিছু বিঘ্ন ঘটছে।