আবাসন তৈরি করলেও সেখানে পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যথাযথ পরিকল্পনা না রাখায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আধুনিক ও জনকল্যাণমূলক মহানগরী বিনির্মাণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন’–সংক্রান্ত সভায় অংশ নেন আতিকুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা কেন মিরপুর ডিওএইচএসের পাশে ৩ হাজার ৪০০ ফ্ল্যাট করার পারমিশন দিয়েছেন? আপনারা কি পরিকল্পনা করেছেন পয়োনিষ্কাশন সংযোগ কোন দিক দিয়ে যাবে? তাদের এতগুলো গাড়ি কোথায় পার্কিং হবে? কোন রুট হয়ে এসব বের হবে? এটা কিন্তু পরিকল্পনা করা হয়নি।’
ডিএনসিসির মেয়র বলেন, মিরপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ সুন্দর করে ১০টি ভবন করেছে। ৭৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে। কিন্তু এসব ফ্ল্যাটের ময়লা কোথায় ফেলবে, এ জন্য এক কাঠা জায়গাও এসটিএসের (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) জন্য রাখল না। কেন রাখেনি?
তিন মাসের মধ্যে সেখানে এসটিএসের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘তা না হলে আমি সেখান থেকে ময়লা নেব না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কী ধরনের পরিকল্পনা করলেন, শহরকে নোংরা করার জন্য। আপনাদের ৭৩৬টি ফ্ল্যাটের ময়লা সড়কের ওপরে ফেলে দিচ্ছেন। চমৎকার পরিকল্পনা আপনাদের!’
একইভাবে উত্তরা হাউজিং সোসাইটি ১৪ নম্বর সেক্টরে বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘আমরা চিন্তা করলাম না সেখানে এসটিএস লাগবে। ময়লা রাস্তার ওপর ফেলতে হচ্ছে। এই শহরকে নষ্ট করার জন্য কেন পরিকল্পনা করবেন? নন্দিত হাতিরঝিল হয়েছে। কেউ চিন্তা করলেন না মগবাজার কারওয়ান বাজারের পানি কোন দিক দিয়ে নামবে। বৃষ্টি হলে এই এলাকায় কোমরসম পানি হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য দায়ী কে?’
সব বর্জ্যের সংযোগ লেক দিয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘গুলশান লেক এবং বনানী লেকে যাঁরা চোরাই লাইন করে পয়োনালার সংযোগ দিয়েছেন, শীতের মৌসুমে প্রতিটি সংযোগ আমি বন্ধ করে দেব। আপনাদের কী অবস্থা হবে, এটা আমি জানি না!’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক হয়েছে। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আমরা এসব দেখাতে চাই। গুলশান, উত্তরার ছোট ছোট জায়গাতে এক কাঠা, দুই কাঠার প্লট কিন্তু আছে। এই প্লটগুলো মেহেরবানি করে কাউকে দেবেন না। এই প্লটগুলো আমাদের দেন। আমরা ছোট ছোট পার্ক করে জনগণকে দিতে চাই।’
আতিক বলেন, ‘রাজউক ও গৃহায়ণ যেসব এলাকায় খেলার মাঠ করেননি, এসটিএস রাখেননি, পার্কিংয়ের বন্দোবস্ত রাখেননি, মেহেরবানি করে আমরা আপনাদের চিঠি দেব। আপনারা সে জায়গাগুলো আমাদের হস্তান্তর করে দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, এত বড় উত্তরা সেক্টর করলেন। ৬ নম্বরে একটি বাদে কোনো কমিউনিটি সেন্টার করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, স্থপতি নগর–পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সভাপতি মো. আবদুস সবুর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।