খেলার মাঠে হবে থানা

জায়গাটিতে কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন করতে চায় সরকার। তবে বাসিন্দারা চান, খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠটিই এ এলাকার খেলাধুলার একমাত্র অবলম্বন। স্থানটিতে থানা নির্মাণ করার সংবাদে একমাত্র মাঠ হারানোর শঙ্কায় শিশুরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে

ছোট একটু খোলা জায়গা। চারদিকে কয়েকটি রেইনট্রি ও মেহগনিগাছ। এক পাশে আবর্জনার ভাগাড়ও আছে সেখানে। লাশ গোসলের ব্যবস্থাও রয়েছে। জায়গাটা কিছুটা খোলা হওয়ায় সেখানে স্থানীয় শিশুরা সুযোগ পেলেই খেলায় মেতে ওঠে। বড়রাও প্রয়োজনে যান।

ঢাকার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত ওই জায়গা এখন আর স্থানীয় লোকজনের এভাবে ব্যবহারের সুযোগ থাকছে না। এটি এখন কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ফাঁকা এই জায়গা সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত কোনো মাঠ নয়। স্থানীয় লোকজন মাঠের মতো করেই ব্যবহার করে আসছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সাতজন শিশু ক্রিকেট খেলছে। মাঠের বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই তারা বলে, জায়গাটি পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আর বেশি দিন এখানে খেলতে পারবে না।

স্থানীয় দোকানি মো. ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চারা এখানে সারা দিন খেলে। এখন শুনতেছি, থানা বানাইব। কিন্তু এলাকাবাসী তা চান না।’

গত ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। নোটিশে এই জমিকে পতিত জমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তেঁতুলতলা নামের এ মাঠ রক্ষার্থে স্থানীয় লোকজন গত ১১ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করেছেন। জায়গাটিকে রক্ষা করে মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় লোকজন জানান, এ জায়গার প্রকৃত মালিক যিনি, তিনি মুক্তিযুদ্ধের পর আর দেশে ফেরেননি। পতিত জমি হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এলাকার আরেক বাসিন্দা সৈয়দা রত্না বলেন, ‘পুরো এলাকায় কোনো মাঠ নেই। এই মাঠ না থাকলে আমাদের বাচ্চারা কোথায় খেলবে? মাঠ নষ্ট করে কেন ভবন করতে হবে? বাচ্চাদের তো আরও খেলার জায়গা করে দেওয়ার কথা। এখানে খেলাধুলা করেই আমরা বড় হয়েছি।’

স্থানীয় লোকজন জায়গাটা মাঠ হিসেবে রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁরা স্থানীয় সাংসদের কাছেও গিয়েছিলেন। গণস্বাক্ষর নিয়ে তা প্রধানমন্ত্রী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রকে দেবেন।

জায়গাটির বিষয়ে ঢাকা–১০ আসনের সাংসদ শফিউল ইসলাম অবগত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার জনগণের সুবিধার জন্য যেটা ভালো, সেটাই হওয়া উচিত। এমনিতেই আমাদের মাঠ, খেলার জায়গা কম। এ ছাড়া ক্লাবের মাঠ যা আছে, তা সবার জন্য নয়। ছোট বাচ্চা যারা খেলতে চায়, তাদের জন্য সেভাবে কোনো জায়গা নেই। কিন্তু এগুলো খুব দরকার। তবে জনগণ যেটা চাইবে, রাষ্ট্র সেটাই করবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এ রকম কিছু পকেট স্পেস আছে। যেগুলো অযত্ন–অবহেলায় পড়ে আছে। যেখানে এগুলো আছে, সেগুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদ। বড় ধরনের পার্ক বা মাঠের চেয়ে মানুষ হাঁটার দূরত্বের জায়গায় বেশি যায়। বাসার ছোট বাচ্চা, বয়স্ক বা নারীরা সেখানে যায়। এই জায়গাগুলো সংস্কার করে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া উচিত।’

জেলা প্রশাসন বলছে, তারা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। সরকার যেটা বলবে, তারা তা-ই করবে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এম জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার থেকে এ জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে বলা হয়েছে। প্রশাসন সে অনুযায়ী নোটিশ দিয়েছে। এখন যদি আবার বলা হয়, এ জমিতে থানা করা যাবে না, তাহলে প্রশাসন আবার সেভাবে নোটিশ দেবে।