২২ বছর আগের এক খুনের ঘটনায় সাজা হয়েছে খুলনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের দুই সহযোগীর। মামলার এক রাজসাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে আজ সোমবার একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও অপরজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। একই মামলার অপর দুই আসামি খালাস পেয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন জয়নাল ওরফে জয়নাল সরকার। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে রোস্তম আলীর। দণ্ডিত এই দুই আসামি পলাতক। খালাসপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন এরশাদ শিকদারের পিয়ন ‘ইদ্রিস জামাই’ ও ‘জামাই ফারুক’। তাঁরা দুজনই কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়।
ঢাকার লালবাগের আবদুল আজিজ চাকলাদার নামের এক ব্যবসায়ী খুনের মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি মোট সাতজন। তাঁরা হলেন এরশাদ শিকদার, তাঁর সহযোগী লস্কর লিয়াকত, নূরে আলম, ইদ্রিস জামাই, জয়নাল সরকার, জামাই ফারুক ও রোস্তম আলী। তাঁদের মধ্যে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০০৪ সালে। আর অন্যতম আসামি লিয়াকত লস্কর মারা গেছেন। মামলার রাজসাক্ষী হন নূরে আলম।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা আবদুল আজিজ চাকলাদার। পেশায় তিনি কাচ ব্যবসায়ী ছিলেন। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট। ১৯৯৮ সালের ৯ মার্চ তিনি গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে ঢাকার বাসা থেকে বের হন। দুই-তিন দিন পর খোঁজ নিয়ে পরিবার জানতে পারে, আজিজ গ্রামের বাড়িতে যাননি। পরে আজিজের ছোট ভাই বাচ্চু মিয়া লালবাগ থানায় মাকসুদ ও আমান উল্লাহ নামের দুই ব্যক্তিকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে, এরশাদ শিকদারের হাতে খুন হয়েছেন আবদুল আজিজ।
২০০০ সালের ৪ এপ্রিল সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় লালবাগ থানা-পুলিশ। সেটি আমলে নিয়ে ২০০৭ সালের ১৫ আগস্ট আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তবে বিচার শুরুর ১২ বছরেও রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করেনি। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামির তালিকায় থাকা এরশাদ শিকদারের দেহরক্ষী নূরে আলমকে রাজসাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১৭ জুলাই ঢাকার আদালত রাজসাক্ষী হিসেবে নূরে আলমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তাঁর জবানবন্দিতে উঠে আসে, ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ চাকলাদারকে খুলনায় ডেকে নিয়ে কীভাবে এরশাদ শিকদার এবং তাঁর সহযোগীরা খুন করেছিলেন।
এরশাদ সিকদারের বহু খুনের সাক্ষী নূরে আলম। তিনি ২০ বছর কারাগারে থাকার পর গত বছর আদালতের আদেশে মুক্তি পান। তিনি এর আগে একাধিক মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন নূরে আলম।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) বেলায়েত হোসেন। সাজা পাওয়া দুই আসামির পক্ষে আদালতে কেউ ছিলেন না। তবে খালাস পাওয়া দুজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল গনি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি বলে তাঁর দুই মক্কেল খালাস পেয়েছেন।