আইন নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের শিক্ষকেরা। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে সাদা দলের শিক্ষকেরা এই দাবি জানান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাদা দলের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘সরকারে থাকা অনেক ব্যক্তি সামান্য পীড়ায় পড়লেও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি পান। অথচ গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়লেও আইনের দোহাই ও অপব্যাখ্যা দিয়ে তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, দায়িত্বশীল জায়গা থেকে অত্যন্ত তিরস্কার করে কথা বলা হচ্ছে। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের কটূক্তির বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর বিদেশে সুচিকিৎসার অনুমতির জন্য সরকারের কাছে তাঁর পরিবার থেকে আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কোনো অবস্থাতেই নমনীয় হচ্ছে না।’
মো. লুৎফর রহমান আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে একেবারেই সাধারণ মানুষের পর্যায়ে বিবেচনা করলে চলবে না৷ প্রথমত, তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী৷ তিনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। দ্বিতীয়ত, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তৃতীয়ত, দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থত, তিনি আশির দশকের স্বৈরাচার হটাও আন্দোলন এবং পরবর্তী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। ফলে আমরা মনে করি, আমাদের বক্তব্য ও দাবিকে সরকার নিশ্চয়ই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে এবং তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’
জেলে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়াকে ‘স্লো পয়জনিং’ করা হয়েছে, তা প্রমাণিত হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কায় তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সাদা দলের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১৩-১৪ বছরে অবৈধ সম্পদে ভরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হলেও তাঁদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়। অথচ দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, একজন বয়স্ক নারী, মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ও বীর উত্তমের স্ত্রী ও মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার আন্দোলনকে অন্যদিকে ধাবিত করে স্তিমিত করার জন্য মুরাদ হাসানকে সামনে নিয়ে এসেছেন নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
মানববন্ধনে সাদা দলের নেতা ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন আহমেদ বলেন, ‘চিকিৎসা পাওয়া মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে কী পরিণতি হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সেই উদাহরণ আছে। সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, খালেদা জিয়াকে মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। চিকিৎসার মতো সর্বজনীন মানবাধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো আইন কোনোপ্রকার বাধা হতে পারে না৷ সুতরাং, আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা বড় ধরনের অন্যায়। যদি তা করা হয়, সেখানে আইন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, বাধা হয়ে দাঁড়াবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিণতি কী হয়, তারও অসংখ্য উদাহরণ দেশে-বিদেশে আছে। কোনো অজুহাত তৈরি না করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।’
সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর মুক্তির আন্দোলন শুধু বাংলাদেশের পরিসীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এতে কর্ণপাত করছে না৷ বারবার আইনের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। আসলে এখানে আইনের চেয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। খালেদা জিয়াকে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যে মামলায় তাঁকে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, সেটি একটি সাজানো ও মিথ্যা মামলা।’
সাদা দলের সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সাবেক আহ্বায়ক আখতার হোসেন খান, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রশীদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখার নেতা এ বি এম শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।