এক বছর ধরে পদচারী–সেতু নির্মাণের কাঠামো ফুটপাতে। সম্প্রতি মিরপুরের টোলারবাগের।
এক বছর ধরে পদচারী–সেতু নির্মাণের কাঠামো ফুটপাতে। সম্প্রতি মিরপুরের টোলারবাগের।

কাঠামো ফুটপাতে, পথচারী রাস্তায়

তার না সরানোয় এক দশক কাজ বন্ধ ছিল শংকর বাসস্ট্যান্ডের পদচারী-সেতুটির। টোলারবাগে ফুটপাতেই পড়ে আছে পদচারী-সেতুর কাঠামো।

সড়কের উভয় পাশে বসানো হয় স্তম্ভ। ইস্পাত দিয়ে যুক্ত করা হয় সেসব স্তম্ভকে। বাকি ছিল শুধু ওপরের পাটাতন বসানোর কাজ। এটা হলে নিরাপদে পদচারী–সেতুতে হাঁটতে পারত পথচারী। কিন্তু একটি দশক কেটে গেলেও পথচারীর অপেক্ষা আর ফুরোল না। নির্মাণাধীন এই পদচারী–সেতুটি রাজধানীর শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। এদিকে মিরপুরের টোলারবাগ এলাকায় ফুটপাতে ফেলে রাখা হয়েছে পদচারী-সেতুর কাঠামো। এক বছর ধরে পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে রাস্তায়।

শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকার সেতুটির বাকি অংশের নির্মাণকাজ সম্প্রতি শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ (ডিএসসিসি)। ২০১১ সালে নির্মাণকাজ শুরুর পর এক দশক ফেলে রাখার বিষয়ে সংস্থাটির প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, যে জায়গায় সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হয়, ওই স্থানে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার আছে। সেতুর আংশিক কাজ করার পর দেখা যায়, ওই তারের স্পর্শ সেতুর কাঠামোতে লাগছে। এতে যেকোনো সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়। তাই তখন কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়। ওই তার না সরানোতেই সেতুটির নির্মাণকাজ এত দিন বন্ধ রাখা হয়।

অনেক বছর ধরেই ফাঁকা কাঠামো দেখছি। আমাদের অপেক্ষা আর ফুরোয় না। এখন আবার পুরোনো অবকাঠামোতেই নির্মাণকাজ হচ্ছে। এতে স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ আছে।
মো. রোকনুজ্জামান, ধানমন্ডির শংকরের বাসিন্দা

সম্প্রতি পদচারী-সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সেতুর অবশিষ্ট কাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। গত ৩০ আগস্ট থেকে এই কাজ শুরু হয় বলে জানান শ্রমিক সাগর মিয়া।

ধানমন্ডির শংকরের বাসিন্দা মো. রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই ফাঁকা কাঠামো দেখছি। আমাদের অপেক্ষা আর ফুরোয় না। এখন আবার পুরোনো অবকাঠামোতেই নির্মাণকাজ হচ্ছে। এতে স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ আছে।’

বিদ্যুতের তার সরাতে ১০ বছর সময় লাগার বিষয়ে দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মুন্সি মো. আবুল হাসেম বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডিপিডিসিকে তার সরানোর চিঠি দেওয়া হয়। তখন তারা বৈদ্যুতিক তার সরাতে টাকা চায়। কিন্তু প্রকল্পের পরিকল্পনায় লাইন সরানোর টাকা বরাদ্দ ছিল না। তাই টাকাও দেওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে ঢাকা দুটি সিটিতে ভাগ হয়। এসব কারণে পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। পরে টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর ডিপিডিসিকে কয়েক মাস আগে সেই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে তার সরানো হয়েছে।

এদিকে প্রায় এক বছর ধরে মিরপুরের টোলারবাগ এলাকায় ফুটপাতে পদচারী-সেতুর কাঠামো ফেলে রাখায় পথচারীরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। এ ছাড়া সেতুর কিছু মালামাল সড়কে রাখা হয়েছে। এতে সড়কের জায়গা কমে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

পদচারী-সেতুটি চালু হলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হতো। কিন্তু উল্টো সেতু নির্মাণের মালামাল এনে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলছে।
রাফসান জামান, মডেল একাডেমির শিক্ষার্থী

সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১ নম্বরে টোলারবাগ এলাকার ডেলটা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের বিপরীত পাশে সমবায় বাজারসংলগ্ন জায়গায় সড়কের ওপর পদচারী-সেতুর মালামাল ফেলে রাখা হয়েছে। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সড়কের দুই প্রান্তে থাকা স্তম্ভগুলো। রাস্তায় ফেলে রাখা পাটাতন বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। তবে এই বেড়ার কারণে পাশের ফুটপাতসহ সড়কের এক লেনের বেশি জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে মূল সড়কে নেমে, ঝুঁকি নিয়ে।

এক দশক আগে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। সম্প্রতি শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়

পদচারী-সেতুটি যে অংশে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, এর দুই পাশে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। একটি মডেল একাডেমি ও বিএডিসি উচ্চবিদ্যালয়।

মডেল একাডেমির শিক্ষার্থী রাফসান জামান বলে, ‘পদচারী-সেতুটি চালু হলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হতো। কিন্তু উল্টো সেতু নির্মাণের মালামাল এনে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলছে।’

টোলারবাগের বাসিন্দা বজলুর খান বলেন, এক বছর আগে থেকেই ঠিকাদারের লোকজন মালপত্র এনে রাস্তায় ফেলে রেখেছেন।

পদচারী-সেতুটি নির্মাণ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, খুঁটিগুলো সরাতে ডেসকোকে চিঠি দেওয়া হয়। ডেসকো তখন ডিমান্ড নোট দেয়। সে অনুযায়ী অর্থ পরিশোধের পর ডেসকো তাদের খুঁটিগুলো সরিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ট্রাফিক প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরহাদ বলেন, কাজের বর্ধিত মেয়াদ আগামী নভেম্বরের পর্যন্ত।