কিশোরী নুপূর আক্তারের মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগেই আছে। তা দেখে চিকিৎসক ও নার্সদের মুখেও তৃপ্তির হাসি। নূপুর বলল, সে আর হাসপাতালে থাকবে না, বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করবে।
চিকিৎসক আশ্রাফুল হক তখন হাসতে হাসতে বললেন, ‘মেয়ে বাড়ি যেতে চাচ্ছে, আর তার মা–বাবা এখনো বুঝতে পারছেন না তাঁদের মেয়ের আসলেই অস্ত্রোপচার হয়েছে কি না। নুপূর ভালো আছে দেখে আমরাও ছুটি দিয়ে দিতে চাইছি, কিন্তু মা–বাবা আপত্তি করছেন। মেয়ের হৃদ্যন্ত্রের (হার্টের) অস্ত্রোপচার হয়েছে, ১০ থেকে ১২ দিন হাসপাতালে না রেখেই কেন আমরা ছুটি দিয়ে দিতে চাইছি, সেটি তাঁরা বুঝতে পারছেন না।’
সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজধানীর জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে সেখানে ঢোকার আগে বিশেষ পোশাক পরে যাওয়া হয়।
জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে, অর্থাৎ সরকারি হাসপাতালে এমআইসিএস (মিনিমালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি) বা কাটাছেঁড়া ছাড়া হৃদ্যন্ত্রের অস্ত্রোপচার করা প্রথম রোগী নূপুর। রোববার প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক সার্জন আশ্রাফুল হকের নেতৃত্বে এ অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারে দেশের বিশিষ্ট হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। এর আগে দেশে হার্ট ফাউন্ডেশনে এ ধরনের কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়েছে।
জানতে চাইলে চিকিৎসক আশ্রাফুল হক প্রথম আলোকে বললেন, ‘এমআইসিএসে পুরো বুক ফাঁকা না করে, পাঁজরের হাড় না কেটে শুধু ছিদ্র করে অস্ত্রোপচারটি করা হয়। তার শরীরে যাতে কোনো দাগ না থাকে এবং অন্য কোনো জটিলতা না হয়, সেদিকে আমরা সচেতন ছিলাম। এ অস্ত্রোপচারে রক্তক্ষরণ কম হয়। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। দেশের বাইরে বা বেসরকারি হাসপাতালে এ ধরনের অস্ত্রোপচার বেশ ব্যয়বহুল। তবে সরকারি হাসপাতালে এ অস্ত্রোপচারে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকাও খরচ করতে হয়নি। অস্ত্রোপচারের পর নুপূর সুস্থ বলেই আমরা ছুটি দিতে চাইছি।’
পাবনার মেয়ে নুপূর। পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে। নুপূরের মা মোছাম্মৎ আনজু জানালেন, জন্মগতভাবেই নুপূরের হৃদ্যন্ত্রে বিভিন্ন সমস্যা ছিল। খেলতে গিয়েও হাঁপিয়ে যেত। বুকে নিলেও মেয়ে বলত, তার খারাপ লাগছে। সাত বছর বয়সে প্রথম হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র ধরা পড়ে। তারপর ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়। এবার জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তির সাত দিনের মাথায় মেয়ের মুখে হাসি দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, ‘মেয়ের অসুখ, সারাক্ষণ মেয়েরে নিয়ে চিন্তা করেছি। এখন মেয়ের মুখে হাসি দেইখ্যা একটু শান্তি পাইছি।’
নুপূরের বাবা মিজানুর মোল্লা তাঁতের কাজ করেন। তাঁর দুই ছেলে আর এক মেয়ে। একমাত্র মেয়ের মুখে হাসি দেখে তিনিও চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অস্ত্রোপচার সম্পর্কে অবগত এবং তিনি নুপূরের খোঁজ নিয়েছেন বলেও জানালেন চিকিৎসক আশ্রাফুল হক।