ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা ছয়টায়। তালতলা কবরস্থানে প্রবেশ করে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স দুটি কবরস্থানের শেষ মাথায় ঝিলপাড়ের প্রান্তে এসে থামে। একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামেন পাঁচ ব্যক্তি। তাঁদের প্রত্যেকের পরনে ছিল ব্যক্তিগত সুরক্ষার সরঞ্জাম (পিপিই)। তাঁরা প্রথম অ্যাম্বুলেন্স থেকে একটি স্ট্রেচারে করে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশ নামান। এরপর কবরস্থানের ইমাম ও উপস্থিত আটজন মিলে জানাজা পড়েন। জানাজা শেষে স্ট্রেচারে করে তাঁরা মৃতদেহটি কবরের কাছে আনেন।
এরপর পিপিই পরা তিনজন মিলে মৃতদেহটি কবরে নামান। কবরে দেহ নামানোর পর মাটি দেওয়া হয়। সব শেষে দাফনে অংশ নেওয়া ওই পাঁচজন কবরস্থানের ঝিলের পাড়ে এসে পিপিই খুলে ফেলেন। পিপিইগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তা নষ্ট করেন তাঁরা। দাফনকাজ চলার সময় কবরস্থানের ভেতরে কয়েকজনকে কোনো সুরক্ষা ছাড়াই ঘুরতে দেখা যায়।
আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত সন্দেহে একজনকে এভাবেই দাফন করা হয়।
কবরস্থানের দায়িত্বে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাফন করা ওই নারীর বয়স ৫০ বছর। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। দাফনের বিষয়ে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের স্টাফ মো. ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, দাফনের সময় ওই নারীর স্বামী ও সন্তান উপস্থিত ছিলেন। দাফনের আগে তাঁরা কয়েকজন মিলে জানাজা পড়েন।
ওই নারীর স্বামী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা এখনো জানা যায়নি। তাঁর স্ত্রী কয়েক দিন ধরেই সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অল্প অল্প অসুস্থ ছিলেন। তবে তাঁরা হাসপাতালে যাননি।
মৃতের স্বামী জানান, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) জানানো হলে আজ রোববার সকালে তাঁদের মোহাম্মদপুরের বাসায় এসে নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেই পরীক্ষার ফল আসেনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আর পরীক্ষার ফল দিয়ে কী হবে। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাঁকে খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এই কবরস্থানে প্রথমে দাফন করতে দিচ্ছিলেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়।
এরপর গত বুধবার (২৫ মার্চ) খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছিল। সেই দাফনে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয় এক যুবক। তাঁর সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমবার দাফন করা ওই ব্যক্তির কোনো আত্মীয় আসেননি লাশের সঙ্গে। যাঁরা মৃতদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে করে এনেছিলেন, তাঁরাও কেউ লাশ ধরতে রাজি হননি। পরে আমরা মহল্লার চার যুবক মিলে পিপিই পরে ওই দেহ দাফন করি। এলাকার অনেকেই দাফন না করার পক্ষে ছিল। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত আর এভাবে লাশ পড়ে থাকতে দেখে আমাদের মায়া হয়।’