কার্যকর হওয়া ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধি কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে গত ১ এপ্রিল থেকে পানির দাম প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর সূত্র ধরে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের কয়েকটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ গত ১৫ জুন রিট করেন।
এর ওপর শুনানি নিয়ে গত ২২ জুন হাইকোর্টের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত দাম আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দেন। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়মিত বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন।
অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুন চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন।
আইনজীবী তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের এর আগের আদেশ অনুসারে রিটটি নিয়মিত বেঞ্চে উপস্থাপন করা হলে শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন।
রুলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬-এর ২২ (৩) ধারা অনুযায়ী পানির দাম বাড়িয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা অফিস আদেশ কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬-এর ২২ (৩) ধারাটি কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সেবা বিভাগের সচিব, আইনসচিব, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
আদালতে রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।
গত ১ এপ্রিল থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ হারে পানির বর্ধিত দাম আদায় শুরু হয়। এই বর্ধিত দাম আদায় থেকে বিরত থাকতে ওই রিটটি করেন আইনজীবী।
পানির দাম বাড়ানোসংক্রান্ত ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের ২২ (১) ও ২২ (৩) ধারার বলে পানির প্রকৃত উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূলের সামঞ্জস্য বিধান এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধিজনিত খরচ সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদনক্রমে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির অভিকর (দাম) আবাসিকে ১১ টাকা ৫৭ পয়সার স্থলে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা ৪ পয়সার স্থলে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হলো। সংশোধিত অভিকর (দাম) ওই আইনের ২৩ ধারা অনুসারে ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
রিট আবেদনকারীর যুক্তি, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করে। এ বছর প্রায় ২৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এ হিসাবে এক অর্থবছরেই দুবার দাম বাড়ানো হয়। অথচ আইনের ২২ (২) ধারা অনুসারে দাম (অভিকর বা চার্জ) প্রতি অর্থবছরে একবার অনধিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হারে বাড়ানো যায়। আইনের ২২ (১) ধারায় বছরে একবার বাড়ানোর বিষয়ে বলা আছে। আইনের ২৩ ধারা অনুসারে নির্ধারণ করা পানির দাম কার্যকরের ৩০ দিন আগে তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। প্রায় ২৫ শতাংশ বর্ধিত দাম কার্যকরের ওই বিজ্ঞপ্তিটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়, যেখানে তারিখ উল্লেখ নেই। তাই এটি আইনের দৃষ্টিতে বৈধ বিজ্ঞপ্তি হতে পারে না।