পুরান ঢাকার ওয়ারীতে আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। তবে নানা অজুহাতে অনেকেই লকডাউন এলাকা থেকে বের হচ্ছেন। এতে লকডাউন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁদের লকডাউন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি নেই।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দায়সারাভাবে লকডাউন হলে তা করোনা প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা রাখবে না। লকডাউন যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তবে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁদের লকডাউন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি নেই। কারও জরুরি কোনো কাজ থাকলে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ কেউ যাতে অপব্যবহার না করে, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
ডিএসসিসি সচিব দপ্তর সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ওয়ারীর তিনটি রোড ও পাঁচটি গলি লকডাউনের অধীনে থাকবে। রোডগুলো হলো টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন)। গলিগুলো হলো লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যাংকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট। এখন পর্যন্ত এসব এলাকায় দুই শতাধিক লোক করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এলাকাগুলোতে লক্ষাধিক মানুষের বাস।
ওয়ারীর ওই এলাকাগুলো ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয় সূত্র জানায়, লকডাউন বাস্তবায়নে গতকাল শুক্রবার দুপুরের আগেই এই এলাকাগুলোতে যাতায়াতের সব কটি পথ বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য র্যাংকিন স্ট্রিটের উত্তরা ব্যাংকের রাস্তা ও ওয়্যার স্ট্রিটের হট কেকের দোকানের পাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আজ সকাল ছয়টা থেকে লকডাউন শুরু হলেও ওয়্যার স্ট্রিটে ১০টার পর থেকে লোকজন ওয়ারী থেকে বের হওয়ার জন্য রাস্তায় বের হতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হট কেকের দোকানের সামনে ভিড়ও বাড়তে থাকে। অনেকে সেখানে থাকা বুথে নাম-ঠিকানা লিখে বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক ব্যক্তিকে কোনো বাধা ছাড়াই বের হতে দেখা গেছে।
দুপুর ১২টার দিকে লকডাউন এলাকা থেকে বের হন যোগীনগরের বাসিন্দা আবুল হোসেন। এ সময় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বুথের খাতায় লিখেছেন, তিনি গুলিস্তান যাচ্ছেন। কিন্তু কেন যাচ্ছেন, কার কাছে যাচ্ছেন, এর কিছুই খাতায় লেখা নেই।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ারী এলাকায় লকডাউন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক। এ সময় তিনি লকডাউন এলাকায় কোনো অব্যবস্থাপনা নেই বলে দাবি করেন।
এমদাদুল হক বলেন, লকডাউনে প্রতিটি কাজ তাঁরা সুচারুভাবে করছেন। তবে প্রথম দিন হিসেবে যদি কোনো ঘাটতি থেকে থাকে, তা আগামী দিনগুলোতে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, লকডাউনের মধ্যে নাগরিক সেবা দিতে ওয়ারীতে ই-কমার্স রয়েছে, ভ্যান সার্ভিস রয়েছে। তারা বিভিন্ন খাবার দাবার নিয়ে ভেতরে অবস্থান করছে৷ওসুধের দোকানগুলো খোলা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লোকজন পরিষ্কার–পরিছন্নতার কাজ করছেন।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, লকডাউন এলাকায় দুজন ডাক্তার রয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাঁরা করোনায় আক্রান্ত ৪৬ জন রোগীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। করোনার উপসর্গ আছে—এমন পাঁচজন ব্যক্তির নমুনাও সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে।