মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের নিচের বেশির ভাগ জায়গা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এর কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির পার্কিং। মাঝেমধ্যে ঝুপড়ি তুলে সংসার পেতেছেন ছিন্নমূল লোকজন। উড়ালসড়ক বাতিও নেই। কেউ এসব আবর্জনা অপসারণ করে না। দেখভালেরও কেউ নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১১ সালে প্রায় ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কটি নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এর উদ্বোধন করা হয়। এরপর প্রায় দুই বছর এর দেখাশোনা করেনি কেউ। উড়ালসড়কের বেশির ভাগ অংশ পড়েছে ডিএসসিসিতে। ডিএনসিসি এলাকায়ও এর কিছু অংশ আছে। ২০১৯ সালে ডিএসসিসি এই উড়ালসড়ক দেখাশোনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে ডিএসসিসির ১ ও ২ নম্বর অঞ্চল এই উড়ালসড়কের দেখাশোনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পেয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই উড়ালসড়ক দিয়ে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়ে ওঠা–নামার ব্যবস্থা আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উড়ালসড়কের মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক, মৌচাক থেকে মগবাজার এবং মালিবাগ মোড়ের বিভিন্ন জায়গায় নিচের অংশে আবর্জনার স্তূপ জমেছে। কোথাও আছে অবৈধ দখল। কোথাও বসেছে রিকশা, ভ্যান ও গাড়ির মেরামত কারখানা। মালিবাগ চৌধুরীপাড়া অংশে হরেক রকমের পণ্যের অবশিষ্টাংশ, মালিবাগ বাজারের অংশে দোকানের বর্জ্য, খালি কার্টন, ভাঙা ইট, পরিত্যক্ত প্যাকেট, শোলাসহ হরেক রকম আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। ঝুপড়ি তুলে বাস করছে ছিন্নমূলের দল।
মালিবাগ রেলগেট উড়ালসড়কের নিচে রাখা আবর্জনায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়ে। কালি ও ধোঁয়ায় কালো হয়ে আছে উড়ালসড়কের স্তম্ভগুলো। রেলগেট থেকে মৌচাক মার্কেটের সামনের জায়গায় গাড়ি পার্কিং, রিকশা ও ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, অসমাপ্ত এসটিএস (বর্জ্য রাখার ঘর), আবর্জনাভর্তি বড় কনটেইনার, মাটি ও সুরকির সারি সারি বস্তা, গাছের কাটা অংশ, পানির পাইপের পরিত্যক্ত অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাকের দিকে যেতে ইউটার্নের কাছে কয়েকটি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। অযত্নে সেগুলোও ধুলায় আচ্ছন্ন ও মৃতপ্রায়। মৌচাক মার্কেটের সামনে উড়ালসড়কের নিচের পুরো জায়গায় রাবিশ, পচা ফলের বর্জ্য, চেরা কাঠের স্তূপ, পরিত্যক্ত কাগজ, সিরামিকের ভাঙা টাইল ও সড়কের ওপরই ব্যক্তিগত গাড়ি পার্ক করা দেখা যায়। কিছু দূরেই সড়কের ওপর বাসা-বাড়ি থেকে আনা বর্জ্যের স্তূপ ও কনটেইনার। সেখানে বর্জ্যগুলো বাছাইয়ের পর পাওয়া সরঞ্জাম রাখা হচ্ছে উড়ালসড়কের নিচের জায়গায়। উড়ালসড়কের নিচে থাকেন বর্জ্য সংগ্রাহকদের কেউ কেউ। তাঁরা একজন বলেন, আগে অন্য জায়গায় থাকতেন। এখন ময়লার কাজ করার পাশাপাশি উড়ালসড়কের নিচে থাকেন।
মালিবাগ মোড় থেকে রাজারবাগের দিকে একটি এসটিএস। এর পূর্ব দিকে মোটরসাইকেল ও লেগুনাস্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। আর মালিবাগ থেকে শান্তিনগর মোড়ের অংশে পুলিশের গাড়ি একাধিক সারিতে রাখা। আর শান্তিনগর মোড়ে পুলিশ বক্স, এরপরই আছে তাঁবু টাঙানো ছিন্নমূল মানুষের বসবাস।
মগবাজার থেকে ইস্কাটনের উড়ালসড়কের অংশে দুই পাশের গাড়ির সরঞ্জামের দোকানের সামগ্রী, গাড়ির টায়ার আর বাজার। সকালে সেখানে মাছের বাজার বসে আর সারা দিন থাকে মুরগি, কাঁচা শাক-সবজির বাজার। মগবাজার মোড়ের দক্ষিণ দিকে উড়ালসড়কের নিচে লোহার ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে রমনা থানার জব্দ করা শতাধিক মোটরসাইকেল। ধুলাবালির পুরু আস্তরণ জমেছে এর ওপর। এ জায়গাটি হয়ে উঠেছে মশার প্রজনন স্থান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, উড়ালসড়কের দায়িত্ব বুঝে নেওয়া হলেও এখনো বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। দীর্ঘদিন কেউ তদারক না করায় উড়ালসড়কের অধিকাংশ বৈদ্যুতিক তার ও ইলেকট্রিক বাক্স চুরি হয়ে গেছে। এ কারণে রাতে এতে বাতি জ্বলে না। এর আগে একাধিকবার সিগন্যাল বাতি ও সড়কবাতির তার চুরি হয়। দেখাশোনা না করায় নিচের জায়গাটিও ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ।
উড়ালসড়কের দেখাশোনা নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক বলেন, উড়ালসড়কের এক অংশ উত্তরে পড়লেও ডিএসসিসি এর দেখভাল করবে। এর বাকি কাজ নিয়ে একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। অনুমোদন পেলে তিন মাসের মধ্যে উড়ালসড়কের বাকি কাজ শুরু হবে। পরিচ্ছন্নতার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং যন্ত্র, পানিনিষ্কাশনের যন্ত্র ব্যবহার করা হবে এবং বাতিগুলো জ্বালানো হবে। আর নিচের আবর্জনাগুলোও সে সময় পরিষ্কার করা হবে বলে তিনি জানান।