এস কে সিনহার বিরুদ্ধে করা মামলার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আদালতে জমা

এস কে সিনহা
এস কে সিনহা

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলায় জব্দ করা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার সাক্ষী পদ্মা ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) মৃণাল মজুমদার আজ মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এ কাগজপত্র জমা দেন।

এই মামলায় মৃণাল মজুমদারসহ মোট তিনজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অপর দুজন সাক্ষী হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম এবং পদ্মা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার রেজাউল হাসান। আগামী ১ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। মামলার আসামি মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণ গ্রহণসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র আদালতে জমা দেন মামলার সাক্ষী পদ্মা ব্যাংকের কর্মকর্তা মৃণাল মজুমদার।

দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলার দুজন সাক্ষী নিরঞ্জন সাহা ও আসামি মো. শাহজাহান তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের হিসাব খুলেছিলেন। তাঁদের ঋণ নেওয়াসংক্রান্ত সব কাগজপত্র আদালতে জমা দিয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। আদালতে জমা দেওয়া এই কাগজপত্র মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। মৃণাল মজুমদার আদালতকে বলেন, গত বছরের ২৯ জুলাই দুদকের পরিচালক বেনজির আহম্মদ পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় ঋণগ্রহীতা শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার ঋণের কাগজপত্র জব্দ করেন। পরে তাঁর জিম্মায় কাগজপত্র দেওয়া হয়।  
 

কারাগারে থাকা তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীকে (বাবুল চিশতী) কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আর আদালতে হাজির ছিলেন জামিনে থাকা মামলার আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা। মামলায় পলাতক আছেন চারজন।

তাঁরা হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক ও এস কে সিনহার কথিত পিএস রণজিৎ চন্দ্র সাহা এবং রণজিতের স্ত্রী সান্ত্রী রায় (সিমি)। আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনি ও শাহিনুর ইসলাম।

মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন আদালতকে বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ও শাজাহান তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) গুলশান শাখায় দুটি চলতি হিসাব খোলেন। পরদিন পৃথক দুটি হিসাবের বিপরীতে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করা হয়। ঋণের আবেদনপত্রে ঠিকানা হিসেবে উত্তরার একটি বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। যে বাড়ির মালিক সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তা মামলার আসামি জিয়া উদ্দিন আহমেদ, সফিউদ্দিন আসকারী ও লুৎফুল হক ঋণ আবেদন যাচাই-বাছাই না করে এই ব্যাংক এবং ব্যাংকের কোনো নীতিমালা না মেনেই ঋণ প্রস্তাব প্রস্তুত করেন। তাতে নিজেরা স্বাক্ষর করেন।

আসামি জিয়াউদ্দিন আহমেদ ঋণ প্রস্তাবটি হাতে হাতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় কোনো যাচাই–বাছাই না করে ওই ঋণ প্রস্তাব দুটি অনুমোদনের জন্য নোট আকারে উপস্থাপন করেন।

ব্যাংকটির ক্রেডিট শাখার গাজী সালাহউদ্দিনের কাছে নিয়ে যান। তিনিও কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করে ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমের কাছে নথিটি নিয়ে যান। ব্যাংকের ঋণ পলিসি নীতি অনুযায়ী এ ধরনের ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় তিনি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেন। পরদিন ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত ঋণের টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়।

ওই বছরের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংক শাখায় সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমা হয়। দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন আদালতকে আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংক শাখায় টাকা জমা হওয়ার পর সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিভিন্ন সময়ে টাকা তুলে তা হস্তান্তর স্থানান্তর করেন। এর মধ্যে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর দুটি চেকের মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর আপন ভাইয়ের শাহ্জালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার হিসাবে ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও ৭৪ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন।

ওই টাকাও পরে স্থানান্তর করা হয়। মামলার আসামি রণজিত চন্দ্র সাহা এই ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের সময়ে নিজে ব্যাংকে উপস্থিত থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নাম উল্লেখ করে ভুয়া ঋণ অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন।

ঋণ আবেদনকারী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা আসামি রণজিত চন্দ্র সাহার ভাইপো। অপর ঋণ আবেদনকারী শাহজাহান রণজিৎ চন্দ্র সাহার বাল্যবন্ধু। আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা দুজনই গরিব ও দুস্থ, তাঁরা ব্যবসায়ী নন।