এখন শুনছি ফরমালিন পরীক্ষার যন্ত্রেই ভেজাল ছিল: খাদ্যসচিব

দেশে একসময় ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও ফলমালিন দিয়ে পাকানো হয়েছে সন্দেহে অনেক ফল নষ্ট করা হয়
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেছেন, ফরমালিন আছে ভেবে একসময় ট্রাকে ট্রাকে মাছ, শাকসবজি ও ফলমূল ধ্বংস করা হয়েছে। এখন শুনছি, যে যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করা হতো, তাতেই ভেজাল ছিল।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বুধবার বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যসচিব এ মন্তব্য করেন। ইনস্টিটিউশন অব ফুড প্রফেশনালস বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এত দিন পরে শুনছি যে, ফরমালিন শনাক্তের যন্ত্রেই ভেজাল ছিল। তাহলে যে মাছ ব্যবসায়ীর মাছ নষ্ট করেছি, তাঁর ক্ষতিটা চিন্তা করেন। অথবা এর ফলে আমার–আপনার সন্তান মাছ খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা আমাদের সবার জন্য কষ্টের।’

ফরমালিন থেকে বাঁচতে দেশে ট্রাকে ট্রাকে শাক–সবজি ও ফলমূল ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে সচিব আরও বলেন, ‘আমার অনুতাপ লাগে। কারণ আমি ওই সময় জেলা প্রশাসক ছিলাম। আমি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এ অকাজটা করিয়েছি। কিন্তু আমি এরকম অনুতাপে ভুগি না যে, বিশাল ভুল করে ফেলেছি। কারণ, আমার উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদের খাবার নিরাপদ করা।’

খাদ্যসচিব আরও বলেন, ‘এখন গবেষণাভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে এগোতে হবে। আবার একটি গবেষণার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। পৃথিবীর কোনো দেশ তা করে না। একাধিক গবেষণার ওপর নির্ভর করতে হবে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, ‘আমরা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ঢাকার যত কাঁচাবাজার আছে, সেগুলোর সবজি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। পরীক্ষা করে কাঁচা সবজিতে দূষণের মাত্রা খুবই কম পাচ্ছি।’

সভায় মূল প্রবন্ধের উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. ইকবাল রউফ মামুন। তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা ফরমালিন ছাড়া খাবার নেই। কিন্তু এ

ফরমালিন কোথায় কাজ করে, কোথায় করে না, তার বৈজ্ঞানিক ধারণা তখন কারও ছিল না। ২০১৪ সালে সরকারিভাবে হাজার হাজার টন আম, লিচু, কাঁঠাল ধ্বংস করা হয়েছে। যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছিল না। কিছু আর্থিক ক্ষতি হলো বুঝলাম, কিন্তু সবার মধ্যে যে ভয় ঢুকলো তার পরিমাপ কী দিয়ে করা হবে।’

অধ্যাপক মো. ইকবাল রউফ মামুন আরও বলেন, ‘ভীতি থেকে হাজার হাজার মানুষ বাচ্চাদের ফলমূল খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়। অভিভাবকেরা নিজেরাও খাননি। ফরমালিন কাজ করে প্রোটিনযুক্ত খাবারে। সেই কাজ করারও বৈজ্ঞানিক নিয়ম আছে। প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন মাছ, মুরগি, এগুলোতে ফরমালিন কাজ করবে যদি সেগুলো ছয় সপ্তাহ ফরমালিনে ডুবিয়ে রাখা হয়। আর শাকসবজি ও ফলমূলে ফরমালিন কোনো কাজই করে না বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে।’

উন্নয়ন সংস্থা জাইকার জ্যেষ্ঠ প্রকল্প নির্বাহী জহুরুল হক বলেন, ‘২০১৪ সালে ফরমালিন আছে বলে ট্রাকে ট্রাকে ফলমূল ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তখন হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা আসে ফলে ফরমালিন আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। তখন যে প্রতিষ্ঠানকে তা পরীক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমি সেখানে কর্মরত ছিলাম। আমরা দেখলাম, যে যন্ত্র দিয়ে তারা ফরমালিন আছে বলে শনাক্ত করছে, সেই যন্ত্রই সঠিক না।’

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সহসভাপতি মো. আ‌মন হেলালী বলেন, ‘দেশে এখন ছয় মৌসুমে ফল, শাকসবজি হচ্ছে। সেসব ফল, শাকসবজির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছি, বাকিটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে আমরা জানুয়ারি মাসের ফল ও শাকসবজি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত খেতে পারি সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রুবাদা খন্দকার, ইউএসএইডের কান্ট্রি লিড ফাহিম খান, ইনস্টিটিউশন অব ফুড প্রফেশনালস বাংলাদেশের সভাপতি মনজুরুল হক প্রমুখ।