এখন থেকে ঘরে বসে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাবেন সেবাগ্রহীতারা

ঢাকায় ভবন করতে রাজউক থেকে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নির্মাণ অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। এখন ছাড়পত্র দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে করছে রাজউক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

যাত্রা শুরুর ছয় বছরের মাথায় প্রথমবারের মতো শতভাগ অনলাইনে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গত সোমবার সংস্থাটির অঞ্চল-৫ (ধানমন্ডি, লালবাগ এলাকা) থেকে প্রথমবারের মতো এমন ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর ফলে এখন থেকে রাজউকে একবারের জন্যও না গিয়ে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাবেন সেবাগ্রহীতারা।

রাজউকের এ পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনেকে। সংস্থাটির অঞ্চল-৫–এর উপনগর–পরিকল্পনাবিদ আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে গ্রাহক ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে, স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র অন্য সময়ের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ দিন আগে দেওয়া যাবে।

রাজউকের সেবা সহজীকরণ ও গ্রাহক ভোগান্তি কমানোর উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদানে অনলাইন কার্যক্রম চালু হয়।

তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেবার উদ্বোধন করেন। ওই সময় রাজউকের ৮টি অঞ্চলের মধ্যে অঞ্চল-৫–এর তৎকালীন উপনগর–পরিকল্পনাবিদ (বর্তমানে রাজউকের নগর–পরিকল্পনাবিদ) মো. আশরাফুল ইসলামের প্রচেষ্টায় একটি মসজিদ নির্মাণে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র অনুমোদনের মাধ্যমে অনলাইনে এ সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়।

এরপর ২০১৯ সালে তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাজউক থেকে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও ইমারত নির্মাণ অনুমোদনপত্র—উভয় কার্যক্রমই অনলাইনে চালু করার ঘোষণা দেন। তবু এর কোনোটি সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে নিষ্পত্তি করতে পারেনি রাজউক। এখন ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র পুরোপুরি অনলাইনে দেওয়া হলেও ইমারত নির্মাণ অনুমোদনপত্রের সঙ্গে দেওয়া ভবনের স্থাপত্য নকশা আবেদনকারীকে রাজউকে এসে সংগ্রহ করতে হয়।

ডিসেম্বরের মধ্যে রাজউকের প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত হাজিরাও অনলাইনে দেওয়া যাবে। এতে বেশির ভাগ মানুষকেই আর সেবার জন্য রাজউকে আসতে হবে না। তাঁরা ঘরে বসে সেবা পাবেন।

তবে নির্মাণ অনুমোদনপত্রের আবেদন থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক কাজগুলো অনলাইনে হয়।

এদিকে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণ সম্পর্কে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেউ ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে ও আবেদনটি যথাযথ হলে রাজউক থেকে তিনটি নথি আবেদনকারীকে দেওয়া হয়। এর একটি ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের অনুমোদনপত্র, একটি জরিপ ম্যাপ ও একটি মৌজা ম্যাপ। সোমবারের আগপর্যন্ত ছাড়পত্রের অনুমোদনপত্রটি সেবাগ্রহীতার অনলাইন অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে জরিপ ম্যাপ ও মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করার জন্য আবেদনকারীকে রাজউকে আসতে হতো। কারণ, ম্যাপগুলোতে সনাতন পদ্ধতিতে স্বাক্ষর করতেন রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে অনলাইনে ছাড়পত্র দেওয়াসংক্রান্ত সফটওয়্যারে প্রযুক্তিগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এতে এখন অনলাইনে স্বাক্ষর সংযুক্ত করা হয়েছে, হাতে-কলমে স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় না। এর ফলে আবেদনকারী ছাড়পত্র অনুমোদনপত্রের পাশাপাশি জরিপ ম্যাপ ও মৌজা ম্যাপ সেবাগ্রহীতা অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে প্রথমে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নিতে হয়। এ ছাড়পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়, কোনো প্লটে আদৌ ভবন নির্মাণ করা যাবে কি না। গেলে ভবনটির ব্যবহার (আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র প্রভৃতি) কী হবে। পাশাপাশি ভবন নির্মাণ করতে কী কী শর্ত প্রযোজ্য হবে, সংলগ্ন রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য কী পরিমাণ জায়গা ছাড়তে হবে, প্রস্তাবিত জমিতে রাজউকের মহাপরিকল্পনা—ড্যাপের কী নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয় ছাড়পত্রে উল্লেখ থাকে।

এ জন্য প্রথমে জমির মালিককে রাজউকে আবেদন করতে হয়। আগে কাজটি সশরীর রাজউক কার্যালয়ে গিয়ে করতে হলেও কয়েক বছর ধরে আবেদনের কাজটি অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। এ জন্য ভবন নির্মাণে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে http://cp.rajuk.gov.bd/ ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মূল কপির স্ক্যান আপলোড করে ও ফি জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়।

প্রথমে আবেদনটি যায় একজন উপনগর–পরিকল্পনাবিদের কাছে। তিনি অনলাইনেই আবেদনটি জরিপকারককে পাঠিয়ে দেন। এরপর জরিপকারক, নকশাকার ও সহকারী নগর–পরিকল্পনাবিদের হাত ঘুরে আবার আবেদনটি আসে উপনগর–পরিকল্পনাবিদের কাছে। বিধি অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রটির অনুমোদন দেন। অনলাইন ছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গেলে অতিরিক্ত সময় লাগার পাশাপাশি অনৈতিক অর্থ লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয় বলে রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ৫০০-৬০০টি ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দেয় রাজউক। গত মাসে ৬০৬টি ছাড়পত্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন কারণে বাতিল করা হয়েছে ৬৬টি আবেদন।

সোমবারের পর থেকে অঞ্চল-৫ ছাড়াও রাজউকের বাকি ৭টি অঞ্চলের সবগুলোতেই একে একে শতভাগ অনলাইন পদ্ধতিতে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে সহজে প্রত্যাশিত সেবা পান, সে লক্ষ্যে অনলাইনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজউকের প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত হাজিরাও অনলাইনে দেওয়া যাবে। এতে বেশির ভাগ মানুষকেই আর সেবার জন্য রাজউকে আসতে হবে না। তাঁরা ঘরে বসে সেবা পাবেন।