>
- একাই প্রতিবাদ করেন যুবক
- দূর থেকে কেউ কেউ টিপ্পনীও কাটেন
- এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর
শুক্রবার। বেলা সাড়ে ১১টা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক। জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক যুবক। তাঁর কপালও জাতীয় পতাকা দিয়ে মোড়ানো। তাঁর সামনে বেশ কয়েকটি প্ল্যাকার্ড। এর কোনোটিতে লেখা, ‘প্রতি শিক্ষাঙ্গনে খেলার মাঠ চাই’। আবার কোনোটিতে লেখা, ‘ব্যাগভর্তি বইয়ের ভারে ভারাক্রান্ত শিশুরা মুক্তি চায়’। শিশুর সোনালি শৈশব ফিরিয়ে দিতে একাই রাজপথে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
পথচারীদের অনেকেই উৎসুক চোখে দেখছিলেন একাকী প্রতিবাদ করা এই যুবককে। দূর থেকে কেউ কেউ টিপ্পনীও কাটেন। আবার কেউ কেউ মুঠোফোনে ছবি তোলেন। তবে এসবে ভ্রুক্ষেপ ছিল না তাঁর। নীরবে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
প্রতিবাদী কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এই যুবকের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। নাম তাঁর মোখলেছুর রহমান। বললেন, শিশুদের স্কুলব্যাগ ক্রমেই ভারী হচ্ছে। ভারী স্কুলব্যাগ ও পড়াশোনার চাপে শিশুরা তাদের শৈশব হারিয়ে ফেলছে। ব্যাগভর্তি বই ও বাসার কাজের (হোম ওয়ার্ক) চাপ থেকে শিশুদের মুক্তি দিতে হবে। এসব নিয়ে কেউ কথা বলে না। প্রতিবাদও করে না। তাই একাই রাজপথে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
মোখলেছুরের দাবির মধ্যে রয়েছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। শিশুশিক্ষা নিয়ে কেউ যাতে বাণিজ্য না করে। সমাজ ও দেশের বিভিন্ন বিষয়ে শিশুদের সচেতন ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাইল্ড পার্লামেন্ট (শিশু সংসদ) চালু করা।
প্রতিবাদী মোখলেছুর রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায়। থাকেন ঢাকার লালমাটিয়ায়। সব সময় ন্যায় ও সত্যের পথে থাকতে চান তিনি। বললেন, তাঁর কাজ দেখে অনেকে আড়ালে বিদ্রূপ করে। কিন্তু এতে তাঁর কিছু যায় আসে না।
২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে নিজের বিবেকের তাড়নায় দেশের মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রাজপথে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন মোখলেছুর। এর আগে শিশু নির্যাতন বন্ধ করা, মানসম্মত শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা, নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন সামাজিক ও জাতীয় বিষয়ে নিজের বক্তব্য ব্যানার আর প্ল্যাকার্ডে লিখে জাতীয় প্রেসক্লাব, টিএসসিসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন এই শিক্ষার্থী।