ছবিমেলায় রঘু রাই

একটি আলোকচিত্রই হতে পারে ইতিহাসের সাক্ষী

ছবিমেলায় আলোকচিত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন ভারতের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাই। গতকাল রাজধানীর জার্মান কালচারাল সেন্টারে। ছবি: প্রথম আলো
ছবিমেলায় আলোকচিত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন ভারতের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাই। গতকাল রাজধানীর জার্মান কালচারাল সেন্টারে।  ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর গ্যেটে ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের ভেতরের সব আসন নির্ধারিত সময়ের আগেই পূর্ণ। ঢোকার অপেক্ষায় বাইরে দাঁড়িয়ে অনেকে। সবাই এসেছেন বিশিষ্ট ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাইয়ের বক্তব্য শুনতে। রঘু রাই মঞ্চে উঠতে উঠতে মিলনায়তনে তিল ধারণের জায়গা থাকল না।

রঘু রাই নিজের ও বর্তমান সময়ের আলোকচিত্র নিয়ে বললেন। ভালো আলোকচিত্রী হওয়ার নানা পরামর্শও দেন। জীবন নিয়ে নিজের দর্শনের কথাও তুলে ধরেন। এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলার তৃতীয় দিন ছিল গতকাল শনিবার।

দিনের শেষ আয়োজন ছিল রঘু রাইয়ের সঙ্গে আলোচনা। তিনি শ্রোতাদের কাছে জানতে চান, ছবি তোলার উদ্দেশ্য কী? নিজেই উত্তর দেন, সময় ও মূল্যবান মুহূর্ত, বড় ঘটনা, দৈনন্দিন জীবনকে ধরে রাখা। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগে আধুনিক ক্যামেরা, লেন্স ব্যবহার করে সবাই ফটোগ্রাফার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন রঘু রাই। তিনি বলেন, বিষয়বস্তু শক্তিশালী হলে একটি আলোকচিত্রই ইতিহাসের বড় সাক্ষী হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আগেই ছবির বিষয়বস্তু নির্ধারিত করে রাখা যাবে না। পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্তু থেকে বারবার ছবি তোলাকে তিনি সৃজনশীলতা–বিরোধী বলেই মনে করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাণভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া জনস্রোতকে ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকার যে তরুণ আলোকচিত্রী, তিনিই রঘু রাই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, উদ্বাস্তু, পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ ইত্যাদি নিয়ে কাজের জন্য ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭২ সালে। একাত্তরের ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকেও তিনি পান ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’।

গতকাল সকালে ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে বাংলাদেশের কিংবদন্তি আলোকচিত্রী প্রয়াত রশীদ তালুকদারের কাজ নিয়ে ‘রশীদ তালুকদার (১৯৩৯-২০১১): এ লাইফ’স ওয়ার্ক’ প্রদর্শিত হয়। নির্মাতা, পরিচালক ও লেখক শাহিন দিল-রিয়াজ নির্মিত চলচ্চিত্র শিল্প শহর স্বপ্নলোক (দ্য হ্যাপিয়েস্ট পিপল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড) প্রদর্শিত হয়। ছিল আমেরিকান আলোকচিত্রী সুজান মেইসেলাসের ১৯৭০ দশকের শেষের দিকের নিকারাগুয়া বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে প্রদর্শনী ‘নিকারাগুয়া ইন টাইম’।

দুপুরে গ্যেটে ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের আয়োজিত ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস অ্যান্ড আর্টস হেনোভারের অধ্যাপক কেরেন ফ্রম, ডেনিশ প্রেস আলোকচিত্রী ও ডেনিশ স্কুল অব মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিজমের বিশ্বখ্যাত ফটোজার্নালিজম শিক্ষার প্রধান সোরেন পাগটার, শিল্পী, কিউরেটর ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফের অংশগ্রহণে এবং ভারতীয় লেখিকা, কিউরেটর ও শিক্ষিকা আলিশা শেঠের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনা ‘শ্যুড ফটোগ্রাফি বি টট?’। এরপরেই অনুষ্ঠিত হয় স্কুল অব আইসিপির (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অব ফটোগ্রাফি) ডিন ফ্রেড রিচিনের স্কাইপের মাধ্যমে অংশগ্রহণে ‘চেঞ্জিং স্ট্র্যাটেজিস অব ফটোগ্রাফি’ শীর্ষক আলোচনা।

সন্ধ্যার আয়োজনে গ্যেটেতে অনুষ্ঠিত হয় পাঠশালার প্রাক্তন চার শিক্ষার্থী—আবির আবদুল্লাহ, আরিফুর রহমান, তাসলিমা আক্তার ও তানজিম ওয়াহাবের অংশগ্রহণে টক ‘দ্য শ্যাডো অব দ্য বানিয়ান ট্রি’।