জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান সম্প্রতি এ আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদেশে আদালত বলেছেন, এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন চিকিৎসক এশারত ফারজানা। তবে আসামির তালিকায় তাঁর নাম নেই। এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
এএসপি আনিসুল করিম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে আরও সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া দরকার উল্লেখ করে আদালত বলেন, আগের তদন্ত কর্মকর্তা চিকিৎসক ফারজানার বিষয়ে কোনো তদন্ত না করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার তৎকালীন পরিদর্শক ফারুক মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চিকিৎসক ফারজানার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাননি। তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন, সেই তথ্যও জানতেন না। যে কারণে অভিযোগপত্রে তিনি চিকিৎসক ফারজানার নাম উল্লেখ করেননি।
এশারত ফারজানার আইনজীবী কাজী হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আনিসুল করিম হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামির তালিকায় ফারজানার নাম নেই। তবে এজাহারের বর্ণনায় নাম উল্লেখ ছিল। এ কারণে তিনি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। সাত দিন কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন পান। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
২০২০ সালের ৯ নভেম্বর আনিসুল করিমকে আদাবর থানাধীন মাইন্ড এইড হাসপাতালে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে গত ১০ মার্চ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় আদাবর থানা-পুলিশ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মধ্যযুগীয় কায়দায় এএসপি আনিসুল করিমকে আঘাত করা হয়েছিল। মাইন্ড এইড হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় আনিসুলের দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলা হয়। এর পর আসামিরা তাঁর ঘাড়ে, বুকে ও মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন, হাসপাতালটির পরিচালক আরিফ মাহামুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন, ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুন।
আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি।
আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, আনিসুল করিম সময়মতো বিভাগীয় পদোন্নতি না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হত্যাকাণ্ডের তিন থেকে চার দিন আগে চুপচাপ হয়ে যান। বিষয়টি পরিবারের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন এএসপি আনিসুল করিমকে মনোরোগ চিকিৎসক দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়।