‘দেখো বাবা, এগুলো হলো আমের মুকুল।’ ছেলে আম চিনলেও ‘মুকুল’ জিনিসটি ঠিক কী, তা বুঝতে পারছিল না। বাবা তাকে সহজ করে বুঝিয়ে বললেন, ‘মুকুল হচ্ছে আমের ফুল।’ এবার সে বুঝতে পারল। গত সোমবার বিকেলে শাহজাহানপুরের ফুটপাত ধরে হেঁটে যেতে যেতে বাবা রাকিব হোসেন ছেলে রাফসান আহমেদকে আমের মুকুল দেখাচ্ছিলেন।
রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমার ছোটবেলা কিশোরগঞ্জের একটি গ্রামে কেটেছে। প্রকৃতির খুব কাছে থেকে বড় হয়েছি। তবে ছেলে তো আর সে পরিবেশ পাচ্ছে না। তাই এ সড়কটির পাশ ধরে যে আমের মুকুল দেখা যাচ্ছে, তাই দেখানোর একটু চেষ্টা করছি।’
এবার তীব্র শীতের শেষে এসেছে বসন্ত। গাছে গাছে নানা ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আমগাছের শাখাগুলো ভরা উজ্জ্বল সোনালি মুকুল যেন আকাশের বুকে ডানা মেলে দিয়েছে। দালানে ঠাসা এই স্বল্পবৃক্ষের ঢাকা শহরে মুকুলে ছেয়ে যওয়া আমগাছগুলো আলাদা শোভা ছড়িয়েছে। সবুজ পাতার কিনার ছাপিয়ে ওঠা মুকুলের সোনালি রেণু যেন ফুলশয্যা সাজিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বসন্তকে।
রাজধানীর মতিঝিল কলোনি, শাহজাহানপুর, কমলাপুর রেলওয়ে কলোনি, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, বাসাবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আজিমপুর, মগবাজার, রমনা, হেয়ার রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসসহ বেশ কিছু এলাকায় শোভা ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। ফাল্গুনী হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁক গলে দোলখাওয়া সোনাঝরা মুকুল মন ভালো করে দেয় নগরবাসীর। যা নগরের মানুষের মধ্যে বিলায় অন্য রকম আনন্দ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের সামনে আমের মুকুল শোভা ছড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে দাঁড়িয়ে খোশগল্পে মেতেছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বছরের এ সময়ের প্রকৃতি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে। নগরজুড়ে হরেক রকমের ফুল ফোটে। আমের মুকুল বাতাসে দোল খায়। দেখলেই যেন মনটা ভালো হয়ে যায়।’
এসব মুকুল অনেকের মনে শৈশবের স্মৃতি নাড়া দেয়। নিয়ে যায় ছোটবেলার সেই হারানো দিনগুলোর কাছে। বাসাবো এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমার বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমের সঙ্গে বড় হওয়া। ঝড়ঝাপটা হলে বন্ধুরা মিলে ব্যাগ হাতে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটতাম আমবাগানে। এখন আর বাড়ি যাওয়া হয় না। আমের মুকুল দেখলে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো ফিরে আসে।’