করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের দুই বাসিন্দা মারা যান গত ২১ ও ২২ মার্চ। পরপর দুটি মৃত্যুতে এলাকার বাসিন্দারা ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে হাল ছাড়েননি। এরপর ২৩ মার্চ এলাকাটিকে সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ঢাকার প্রথম লকডাউন ঘোষিত এলাকা এটি। ৪৮ দিনের মাথায় গত রোববার উত্তর টোলারবাগ থেকে পুলিশের পাহারা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলাকার করোনায় আক্রান্ত ১৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নতুন করে ওই এলাকার আর কেউ আক্রান্ত হননি। তবে এখনো এলাকায় বহিরাগত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপরই শুরু হয় টোলারবাগের করোনা-অধ্যায়। ২৩ মার্চ এলাকাটিকে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে দারুসসালাম থানার পুলিশ আবাসিক এলাকার প্রধান ফটকে সার্বক্ষণিক পাহারা বসায়। পরীক্ষা করে এলাকার ১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। তাঁদের কয়েকজন হাসপাতাল ও বাকিরা বাসায় আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) ছিলেন। ১০ এপ্রিলের মধ্যে তাঁরা সবাই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উত্তর টোলারবাগে ৪০টি ৯ তলা ও ১০ তলা ভবনে ৬৭২ ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে ৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। এর পেছনের বস্তিতে ১৬৩টি পরিবারে হাজারখানেক মানুষ থাকে।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ গতকাল বলেন, করোনায় আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে ওঠায় আইইডিসিআরের সঙ্গে পরামর্শে পুলিশের পাহারা তুলে নেওয়া হয়েছে।
মিরপুর পাইকপাড়া আনসার ক্যাম্পের বিপরীত দিকে প্রধান সড়কের পাশের উত্তর টোলারবাগে ঢোকার প্রধান ফটক। গতকাল সোমবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির মালিকদের নিয়োগ করা দুজন নিরাপত্তাকর্মী মাস্ক পরে পাহারায়। তাঁদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে। প্রধান ফটকে তালা। দু-একজন বাইরে বের হচ্ছেন। রাস্তাগুলোতে তেমন লোক নেই।
নিরাপত্তাকর্মীদের একজন কালু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সরে গেলেও দিনরাত পাহারা চলে। বহিরাগত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
উত্তর টোলারবাগের বাড়ি ও ফ্ল্যাট কল্যাণ মালিক সমিতির সভাপতি শুভাশীষ বিশ্বাস গতকাল বলেন, নতুন করে কেউ আক্রান্ত না হওয়াটা স্বস্তির। তবে এখনো সমিতির ব্যবস্থাপনায় সবাইকে সুরক্ষিত রাখতে একধরনের লকডাউনের মতোই রাখা হয়।