ঈদে নতুন জামা-জুতো হলেই কি আর মন ভরে! শিশুদের ঈদ আনন্দের ষোলোকলা পূর্ণ হয় সেলামিতে। তবে তা হওয়া চাই নতুন নোটে। পরিবারের ছোট সদস্যদের ঈদের দিন বড়রা সেলামি দেন। এ নিয়ে পরিবারে সৃষ্টি হয় আনন্দঘন মুহূর্ত।
শিশুদের ঈদ সেলামি দিতে নতুন টাকা সংগ্রহে অনেকে ছুটছেন গুলিস্তান কিংবা মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায়। সেখানেই গড়ে উঠেছে নতুন টাকার বাজার। পুরোনো, ছেঁড়াফাটা নোট দিলেই মিলছে ব্যাংকের নতুন নোট।
গত দুই দিন এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ৫ টাকার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ৫ টাকার একটি নতুন নোটের দাম পড়ছে সাড়ে ৬ টাকা। ৫ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। ২ টাকার ১০০ নোটের বান্ডিল মিলছে ২৮০ টাকায়। ১০ টাকার ১০০টি নোটের বান্ডিল পড়ছে ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা। ৫০ ও ১০০ টাকার বান্ডিলে ১২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে।
গুলিস্তানের মোড়েই দেখা যায়, ছোট ছোট টুলের ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন নোটের নতুন বান্ডিল। কেউ শুধু বিক্রি করছে নতুন নোট কেউ বা পুরোনো ছেঁড়া-ফাটা নোট কিনে নতুন দিচ্ছেন ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম মূল্যে। টাকা কেনাবেচা দুপুর থেকেই বাড়তে থাকে। প্রতিবছরের মতো এবারের রমজানের শেষ কয়েক দিনে কেনাবেচা বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা করছেন টাকা ব্যবসায়ীরা।
বহু বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলেন, মহাজনের মাধ্যমেই শুরু হয় ব্যবসা। একজন মহাজনের হাতে থাকে ১০ বা তার থেকে বেশি দোকান। মহাজনেরাই ব্যাংক থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন ও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চালিয়ে আসছেন এই ব্যবসা।
নতুন টাকা কিনতে আসা গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেন, পুরো ব্যবসা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে। ব্যাংকে গেলে নতুন টাকা এখন পাওয়াই যায় না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও লাভ হয় না। তাই বাধ্য হয়েই গুলিস্তানে নতুন টাকা কিনতে এসেছেন তিনি। আরেক ক্রেতা মাহতাব উদ্দিন জানান, ব্যাংকগুলোর যোগসাজশে চলছে এই ব্যবসা। সাধারণ মানুষদের বাড়ছে ভোগান্তি। বুথ থেকে টাকা তুললে দেখা যায় কিছু কিছু নোট হয় ছেঁড়া নয়তো অন্য কোনো ত্রুটিযুক্ত। কিন্তু এখানে আসলে দেখা পাওয়া যায় নতুন নোটের।
>গুলিস্তানে নতুন নোটের বাজার
৫ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা
২ টাকার ১০০ নোটের বান্ডিল মিলছে ২৮০ টাকায়
১০ টাকার ১০০টি নোটের বান্ডিল পড়ছে ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা
৫০ ও ১০০ টাকার বান্ডিলে ১২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে
রিতা আক্তার দুই বান্ডিল ৫ টাকার নোট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকায় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারীর কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী সোমবার বাড়ি যাব। তাই বাড়ির পোলাপাইনের জন্য ৫ টাকার বান্ডিল কিনলাম। ঈদের সকালে আশপাশ থেকে সব পোলাপাইন আইসা সালাম করলে নতুন টাকা না দিলে হয়! নতুন বান্ডিল হাতে ঈদের আনন্দ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার চোখে–মুখে।’
তবে বিক্রেতাদের মুখে এখনো হাসি ফোটেনি। অনেকেই জানাচ্ছেন এবার বেচাবিক্রি জমে ওঠেনি। বিক্রেতা বাবরউদ্দিন জানালেন, ‘পাঁচ বছর ধরে এই লাইনে আছি। দিন দিন লাভের অঙ্ক কমছে। মহাজন আর স্থানীয় নেতাদের টাকা দিয়ে হাতে থাকে খুবই সামান্য। প্রতি শতে দুই টাকা লাভ করি। এর মধ্যে যখন–তখন দোকান তুইল্লা দেওয়ার হুমকি থাকে।’
লাভ–লোকসানের মধ্যে পাল্লা দিয়েই চলছে টাকা কেনাবেচার এই ব্যবসা। দিন দিন দোকান বাড়ছে, সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা আর প্রতিকূলতাও বাড়ছে। গ্রাহকদের শত অভিযোগ থাকলেও নতুন টাকার খোঁজে গুলিস্তানের এই বাজারই ভরসার জায়গা।