মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশকে রক্ষায় বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগকে হেফাজত ইসলামের সঙ্গে ‘দোস্তি’ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বিএনপিকে বুকে হাত দিয়ে বলতে হবে, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, রাজাকারের দোস্তি করি না। অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগকে বলতে হবে, হেফাজতের সঙ্গে আমার দোস্তি যতটুকু ছিল, তার দিন শেষ।’
রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক কর্মসূচিতে পঙ্কজ ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিরোধের আহ্বানে ঐক্য ন্যাপ ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ শীর্ষক এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
দেশে অবিচারের মহোৎসব চলছে উল্লেখ করে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার বিবরণ শুনে মনে হয়, আমরা কি পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে গেলাম! এর পাশাপাশি নজরে আসছে দোষারোপের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ বলছে এটা বিএনপি করেছে, বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগ করেছে। অন্যদিকে জামায়াত-হেফাজত বগল বাজায় ও আনন্দে আত্মহারা হয়।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব এবার আক্রান্ত হলো; যা ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান আমলে হয়নি, সেটাই এবার হলো। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলো তারা স্বীকারও করছে। কিন্তু এগুলোর বিচার হচ্ছে না। বিচারহীনতা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার উৎসাহদাতা। পূর্ববর্তী একটা হামলারও বিচার হয়নি। উল্টো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার আসামিরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে যান।
পরে পত্রিকায় তীব্রভাবে লেখালেখি হওয়ার পর তা বাতিল করা হয়। ফলে মুখে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বলে ফেনা তুললেও তারা সেই আদর্শ রক্ষায় আন্তরিক হতে পারেন না। এই হচ্ছে বর্তমান সরকারি দল।
সরকারের উদ্দেশে এই বাম নেতা বলেন, হেফাজতের সুপারিশ ও পরামর্শে পাঠ্যপুস্তক বদলানো হয়েছে। আজকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিখছে ঘৃণা, সাম্প্রদায়িকতা ও পরস্পরের প্রতি হিংসা। এটা পরিবর্তন করে আদি পাঠ্যপুস্তকে যেতে হবে।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। হেফাজতের সঙ্গে হাত মেলানো বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সব সংখ্যালঘুর স্বার্থে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় কমিশন করে বিচার করতে হবে এবং ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে।
এ সময় গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, সাংস্কৃতিক চেতনা ও মূল্যবোধে বাংলাদেশ কেন কাঙ্ক্ষিত জায়গায় থাকছে না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন৷
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। সব প্রগতিশীল শক্তিকে একযোগে এই অন্ধকার শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ বলেন, আজকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পক্ষে একটি জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলার সময় এসেছে।
সমাবেশে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মোনায়েম। ঘোষণায় সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার; দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি না করা; ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির ও বাড়িঘর সরকারি ব্যয়ে পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের দ্রুত পুনর্বাসন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া; হামলায় আহত-নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, আহত ব্যক্তিদের সরকারি ব্যয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া; প্রশাসনিক ব্যর্থতার যথাযথ তদন্ত ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃস্থাপন ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ নাজমুল হক প্রধান, ঐক্য ন্যাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম এ সবুর, রঞ্জিত কুমার সাহা ও আলিজা হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।