আরও তিন বছর থাকতে চান তাকসিম এ খান

তাকসিম এ খান
তাকসিম এ খান

১১ বছর আগে যখন ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব নেন তাকসিম এ খান, তখনো ভারী বৃষ্টিতে ডুবত রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা। এখনো একই অবস্থা। ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা, দুর্গন্ধ থাকার অভিযোগ তখনো ছিল, এখনো আছে। রাজধানীর প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ১১ বছর আগেও একই অবস্থা ছিল। নাগরিক সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও নানা বিতর্কের মুখে পড়লেও ওয়াসার ব্যবস্থা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী পদে আরও তিন বছর থাকতে চান তিনি।

তাকসিম এ খানকে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দিতে আজ শনিবার বিকেলে আয়োজন করা হয়েছে ওয়াসার বিশেষ বোর্ড সভা। এ সভার একমাত্র আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো।

দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও কেন ঢাকা ওয়াসা বোর্ড তাকসিমকে একই পদে রাখার বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রেখেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার পানি সরবরাহে উন্নতি হলেও পয়োনিষ্কাশন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে সফলতা নেই। তাকসিম এ খান এমন অসাধারণ কিছু করেননি, যাতে তাঁকে আরও তিন বছর একই পদে রাখতে হবে। প্রথাগতভাবেও একজনের একই পদে দীর্ঘদিন থাকা উচিত নয়। এতে অন্যদের পথ রুদ্ধ হয় এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয় না।

ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হয় ১৯৯৬ সালে পাস হওয়া ‘ওয়াসা অ্যাক্ট’ অনুযায়ী। এ আইনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন এমডি। ওয়াসা বোর্ডের প্রস্তাব বা সুপরিশ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমডি পদে নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু একই ব্যক্তি একই পদে সর্বোচ্চ কতবার বা কত বছর নিয়োগ পেতে পারেন, সে ব্যাপারে আইনে কিছু বলা নেই। ফলে ২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। এরপর আরও চার দফা নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, কখনো ওয়াসা বোর্ড তাকসিম এ খানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছে, মন্ত্রণালয় বিরোধিতা করেছে, আবার কখনো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই তাকসিমকে পুনর্নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব পাস করেছে ওয়াসা বোর্ড।

ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে তাকসিম এ খানের নিয়োগ নিয়ে গত জুলাই মাসে একটি বিবৃতি দিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিবৃতিতে ঢাকা ওয়াসায় সুশাসন নিশ্চিত করতে শীর্ষ পদে নিয়োগে আইনের যথাযথ অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এর উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন করা, পরে এর সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব যোগ হয়। ওয়াসার কর্মকর্তাদের একাংশ দাবি করেন, এখন সংস্থাটি নগরবাসীর চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদন করে।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, তাকসিম এ খানের পঞ্চম দফায় পাওয়া নিয়োগের মেয়াদ আগামী ১৪ অক্টোবর শেষ হবে। এর মধ্যে গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওয়াসার সর্বশেষ বোর্ড সভায় এমডি পদে নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। যদিও ওই সভার আলোচ্যসূচিতে এমডি নিয়োগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী বোর্ড সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ওই সভা আয়োজনের সময় সংস্থাটির বোর্ড চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ সরকার অসুস্থ থাকায় যোগ দেননি। তাঁর অনুপস্থিতিতে সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির বোর্ড সদস্য ও সাবেক সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

১০ সেপ্টেম্বর ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ সরকার মারা যান। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ওয়াসার বোর্ড সচিব শারমিন হক আমীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, শনিবার (আজ) বিকেল পাঁচটায় অনলাইনে বিশেষ বোর্ড সভা হবে। এ সভার একমাত্র আলোচ্যসূচিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে তিন বছরের জন্য নিয়োগের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ।’

এ বিষয়ে ওয়াসার বোর্ড সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি। তবে ওয়াসার একজন বোর্ড সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তাকসিম এ খানের নির্দেশেই এমন আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আলোচ্যসূচিতে শুধু এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা উচিত ছিল। তা না করে এমনভাবে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে, তাকসিম এ খানকে নিয়োগ দিতেই এ সভা হচ্ছে।

তাকসিম এ খানের প্রথম নিয়োগ থেকে শুরু করে পরের সব নিয়োগই প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বোর্ড সভার আলোচ্য সূচি দেখে মনে হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড তাকে নিয়োগ দেবে এটি পূর্বনির্ধারিত। তিনি বলেন, সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে তাকসিম এ খান দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেন, এই সময়ে তাঁর সফলতা–ব্যর্থতা বোর্ড মূল্যায়ন করেনি। বোর্ড সত্যিকারের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে হয় না।