নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আয়শা খানম ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা। শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তিনি নারীর অধিকারকে মানবাধিকারের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় তুলে এনেছেন। ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমৃত্যু নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজ গঠনে সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।
নারী আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রয়াত সভাপতি আয়শা খানমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর কর্মময় জীবনের কথা তুলে ধরে এসব কথা বলেন বক্তারা। তাঁরা আরও বলেন, নারীসমাজের জন্য আয়শা খানম যে প্রদীপ জ্বেলে গেছেন, তা আরও প্রজ্বলিত রাখার মধ্য দিয়ে তাঁকে প্রকৃতভাবে স্মরণ করা হবে।
গত বছরের ২ জানুয়ারি মৃত্যু হয় নারীনেত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানমের। তাঁকে স্মরণ করে আজ সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ‘শ্রদ্ধায় স্মরণে আয়শা খানম’ শিরোনামে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভার প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ বলেন, ‘আয়শা খানম অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন। নারীদের জন্য আন্দোলনে অবদান রাখার প্রসঙ্গ এলে প্রথম সারির নেত্রী হিসেবে তাঁর নাম চলে আসে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। বাল্যবিবাহসহ নারীবিষয়ক বিভিন্ন আইনে তিনি তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন, সুপারিশ দিয়েছেন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, অমায়িক ও সহজ–সরল ব্যবহার দিয়ে আয়শা খানম সবাইকে মুগ্ধ করতেন। খুব কম মানুষ আছেন, যাঁরা যৌবনে যে আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন, তা আমৃত্যু ধরে রাখতে পারেন। আয়শা খানম ছিলেন সেই কম মানুষের একজন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন, তা কর্মের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বের বড় গুণ ছিল, তিনি তাঁর মতামত কখনো অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতেন না।
বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ছাত্র আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, দেশের উন্নয়ন ও সমাজ পরিবর্তনে আয়শা খানম অংশ নিয়েছেন উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তাঁকে তাড়িত করত।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সম্মানসূচক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, আয়শা খানম ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি নারীর অধিকারের বিষয়কে মানবাধিকারের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় তুলে এনেছেন।
আয়শা খানম সব সময় সত্য কথা বলতেন ও সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর অনেক অবদান ছিল বলে উল্লেখ করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি।
আর সভাপতির ভাষণে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আয়শা খানম নারীদের জন্য যে প্রদীপ জ্বেলে গেছেন, তাঁর কর্ম থেকে দীক্ষা নিয়ে সেই প্রদীপ আরও প্রজ্বলিত করতে হবে। মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে তিনি ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। নারী আন্দোলনকে তিনি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিয়েছেন।
আলোচনা সভায় আয়শা খানমকে স্মরণ করে আরও বক্তব্য দেন নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, মণিসিংহ–ফরহাদ ট্রাস্টের সভাপতি শেখর দত্ত ও মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুনন্দা সমাদ্দার। এ ছাড়া সূচনা বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম সভা সঞ্চালনা করেন। সভায় গানের মাধ্যমে আয়শা খানমকে স্মরণ করেন সুস্মিতা আহমেদ।