আমরা আর কত ভুল করব: যানজট প্রসঙ্গে মেয়র আতিক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধারের পর খনন ও পরিষ্কার কাজ শেষে খালটির উদ্বোধন করা হয়। এরপর অতিথি ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে মেয়র নৌকায় করে পুরো খাল ঘুরে দেখেন
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর যানজট প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখন বনানীর সামনে এসে একটি বিশাল যানজটের মধ্যে আটকে থাকতে হয়। আমরা নিজেরাই সেখানে সেতু ভবন করেছি। এর পাশে আবার বিআরটিএর ভবনও করে ফেলেছি।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধারের পর খনন ও পরিষ্কার করার কাজ শেষে খালটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেয়র এ কথা বলেন। গত ৪০ দিন টানা কাজের পর মৃতপ্রায় এ খালে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

রাস্তার ওপরে একটি সেতু ভবন ও বিআরটিএর ভবন কীভাবে হয়—এমন মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ দুটি ভবনের কারণেই বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে শুরু করে বিমানবন্দর পর্যন্ত পুরোটাই এখন যানজটে আটকে থাকে। নিজেরাই এ সমস্যা তৈরি করেছি। আমরা আর কত ভুল করব?’

খাল দখল ও দূষণের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘ঢাকা যে বাসের অযোগ্য, তা তো আমরা নিজেরাই করেছি। কারণ, আমরা নিজেদের বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ সরাসরি খালে দিচ্ছি। খালের ওপরে সেতুগুলো নিচু করে বানানো হয়েছে। খাল দিয়ে যে নৌপথ হবে, নৌকা চলবে, সেই পরিকল্পনা কখনো করা হয়নি। খাল এখন ময়লা ফেলার জায়গা (ডাস্টবিন)। খালে এখন মাছ-ব্যাঙ থাকে না। খালে হয় মশার চাষ।’

এই খালে ২০টি নৌকা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র আতিকুল

খাল রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করতে হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, করপোরেশনের পক্ষে একটি খাল সব সময় পরিষ্কার করা সম্ভব না। এ কাজে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। যারা খালের দখলদার ও যারা খালে ময়লা ফেলে খাল ভরাট করে, সামাজিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন খালগুলো সংরক্ষণ করার জন্য ভাসমান খননযন্ত্র ক্রয় করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘খাল সৃষ্টিকর্তার দান, প্রকৃতির দান। এটা আমরা অস্বীকার করে এর মধ্যেই বর্জ্য ফেলে, বালু ফেলে ভরাট করে অবৈধভাবে দখল করছি। খালকে জনগণের সম্পদ মনে না করে নিজের সম্পদ মনে করছি।’

ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন ২৯ কিলোমিটার খালের জন্য কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘খালে যেন কেউ ময়লা না ফেলে, খালে যাতে কারও বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের নালার সংযোগ না দেওয়া হয়। এই খালে ২০টি নৌকা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। লাউতলা থেকে সরাসরি এলাকাবাসী বুড়িগঙ্গা চলে যেতে পারবে।’

এদিকে ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রামচন্দ্রপুর খাল খনন ও পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়। শেষ হয় গত সোমবার। একটি ভাসমান খননযন্ত্র দিয়ে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করে ৪০ দিনে এ কাজ শেষ হয়েছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে খালটির ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ট্রাক টার্মিনাল উচ্ছেদ করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মেয়র আতিকুল অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে লাউতলা খাল থেকে চারটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় প্রায় ৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে রামচন্দ্রপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থলে যান। এ সময় খালপাড়ের বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে মেয়রকে শুভেচ্ছা জানান।

অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।