উত্তরা মডেল টাউনের বিভিন্ন সেক্টরের রাজউকের খালি প্লটগুলো ভাড়া (লিজ) দিচ্ছেন মালিকেরা। পরে অনুমোদন ছাড়াই সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে দোকান, গ্যারেজ, গাড়ি সারাইয়ের দোকান ও বস্তিঘর।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, খালি প্লটে অনুমোদনহীন বাণিজ্যিক কাজের ফলে সেক্টরের আবাসিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। রাজউকের যথাযথ তদারকি না থাকাতেই এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা বলেন, প্লটে কোনো স্থাপনা করার আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিতে হয়। আর এসব আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক স্থাপনার সুযোগ নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মালিকেরা খালি প্লটে টিনশেড বা আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভাড়া দিচ্ছেন।
উত্তরা মডেল টাউনের ১৪টি সেক্টরের মধ্যে ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরে এখনো অনেক খালি প্লট আছে। কল্যাণ সমিতি সূত্র জানায়, ৯ নম্বর সেক্টরে প্রায় ৬০টি, ১০ নম্বরে প্রায় ২৫০, ১১ নম্বরে প্রায় ১৭০, ১২ নম্বরে প্রায় ৩০০ এবং ১৩ নম্বরে সেক্টরে প্রায় ২০০টি প্লটের স্থাপনায় রাজউকের অনুমোদন নেই। পাঁচ কাঠার এসব প্লটের অধিকাংশেই দোকান, গ্যারেজ, গাড়ি সারাইয়ের দোকান ও বস্তিঘর করা হয়েছে। আর ১৪ নম্বরে এখনো রাজউকের অনেক প্লট কাউকে বরাদ্দই দেওয়া হয়নি। তাই খালি প্লটের সংখ্যা কত, তার সঠিক হিসাব সেক্টর কল্যাণ সমিতির কাছে নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১২/এ সড়কের ৭১/সি ও ১০১ নম্বর প্লটে, ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর প্লটে, ১১ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ৪৯ ও ৭৫ নম্বর প্লটে, ১৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর প্লটে ও ১২ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর প্লটে অনুমোদনহীন অবৈধ সেমিপাকা, আধা পাকা ও টিনশেডের স্থাপনা আছে। এ ছাড়া ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর প্লটে এবং ১১ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
উত্তরার সব কটি সেক্টরের সংগঠন উত্তরা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবদুস শহীদ বলেন, খালি প্লটে অবৈধ স্থাপনা করে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কারণে সেক্টরবাসী অতিষ্ঠ। যেসব মালিক প্লট ভাড়া দিয়ে অবৈধ বাণিজ্যিক কাজের সুযোগ দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজউকের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১০ নম্বর সেক্টরের ১২/এ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর প্লটের পুরোটাতেই অনুমোদনহীন স্থাপনা। প্লটের সামনের দিকে সেমিপাকা ও টিনশেডের পাঁচটি দোকানঘর। এর একটি খাবার হোটেল। এরপর টিনশেডের ১৩টি কক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্লটমালিক ফিরোজ মাহমুদ হোসেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মাসিক ৪০ হাজার টাকায় মো. আবদুর সালামের কাছে প্লটটি তিন বছরের জন্য ভাড়া দেন। পরে ভাড়াটে আবদুস সালাম প্লটে রাজউকের অনুমতি ছাড়াই আধা পাকা ও টিনশেডের ঘর তৈরি করে সেগুলো ভাড়া দেন। প্লটের সামনে পাঁচটি দোকান এককালীন এক থেকে দেড় লাখ টাকা জামানত নিয়ে মাসিক ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে ভাড়া দেওয়া হয়। ভেতরে টিনশেডের ভাড়াটেদের মাসে তিন-চার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।
প্লটের মালিক ফিরোজ মাহমুদ প্লটটি ভাড়া দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রাজউকের অভিযোগ পেলে আমি ভাড়াটে উঠিয়ে দেব। তবে উত্তরায় বিভিন্ন সেক্টরে এভাবে প্লট ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আমার প্লট খালি পড়ে থাকায় আমিও ভাড়া দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি এটা সমর্থন করি না। তবে উত্তরার অন্য সব জায়গায় কাজটি হচ্ছে। রাজউকের আইনে থাকলে সেটা সবার ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হোক।’
রাজউক উত্তরা অঞ্চলের উপপরিচালক (স্টেট ও ভূমি-২) রেজাউল করিম বলেন, প্লটের মালিক নিজের দখল রাখায় আধা পাকা বা টিনশেডের ঘর নির্মাণ করতে পারেন এবং সেখানে যেকোনো ব্যক্তিকে দায়িত্বে রাখতে পারেন। কিন্তু প্লট অন্য একজনকে ভাড়া দেওয়া অবৈধ। আর বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে হলে রাজউকের অনুমোদন লাগে। অনুমোদন না থাকলে রাজউকের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।