বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ছয় খুদে গণিতবিদ নরওয়েতে হতে যাওয়া ৬৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। কোনো চাপ নয়, বরং গণিত উপভোগ করাটাই মূল—অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষের এমন বার্তা নিয়ে ৮ জুলাই দলটি ঢাকা ছাড়বে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তাতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ১৮তমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে যাচ্ছে।
এবার নরওয়ের অসলো শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই আয়োজনে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের এস এম এ নাহিয়ান, নটর ডেম স্কুল অ্যান্ড কলেজের মো. আশরাফুল ইসলাম ফাহিম ও তাহমিদ হামিম চৌধুরী, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের তাহজিব হোসেন খান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ দিশা এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মো. ফোয়াদ আল আলম।
গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে যাওয়া এই দলকে পরিচয় করিয়ে দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল৷ তিনি দলটির উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। উপভোগ করবে। তবে দু-চারটা মেডেল নিয়ে এলে আপত্তি নেই।’ দলটিকে তিনি মনে করিয়ে দেন যে তারা বাংলাদেশের পতাকা বহন করছে।
গণিত অলিম্পিয়াডের শুরুর দিককার কথা স্মরণ করে জাফর ইকবাল বলেন, এই আয়োজনকে জনপ্রিয় করার জন্য সারা দেশে তাঁরা ঘুরেছেন। শুধু গণিতের কথাই না, দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, ভালো মানুষ হওয়ার কথাও এই অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেত। এটা একটা আন্দোলনের মতো।
এ ধরনের আয়োজন স্পনসর বা টাকা পাওয়া সমস্যা ছিল উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এগিয়ে এসেছে। প্রথম আলো বাস্তবায়নে সহযোগিতার পাশাপাশি সারা দেশে আয়োজনটিকে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছে ও জনপ্রিয় করে তুলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সহিদুর রহমান খান বলেন, গণিত অলিম্পিয়াডে স্পনসর করা ব্যয় নয়, এটা বিনিয়োগ। তরুণ দলটির উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশ অনেক দিয়েছে, দেশকেও তার প্রতিদান দিতে হবে। সেই যোগ্যতা এই দলের আছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পাশে আছে, থাকবে।
বিশ্বে বাংলাদেশ এখন নানাভাবেই পরিচিতি পেয়েছে এবং গণিত অলিম্পিয়াড তাতে আরও নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানান প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। ২০২০ সালে তিনি মারা যান। এই অধ্যাপকের স্মরণে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর গণিত দলের সদস্যদের নির্বাচনের জন্য সারা দেশ থেকে ৪১ হাজার ৩৫০ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। পরবর্তী সময়ে ৩ ধাপে অনলাইনে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ৯০৯ বিজয়ীকে নিয়ে সরাসরি জাতীয় গণিত উৎসব হয়। এরপর ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য ৬ শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয়।
বাংলাদেশ ২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন হচ্ছে ১টি সোনা, ৭টি রুপা, ৩১টি ব্রোঞ্জ ও ৩৩টি সম্মানজনক স্বীকৃতি।
১০ জুলাই অসলো শহরে উদ্বোধনী পর্বের মাধ্যমে শুরু হয়ে ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড শেষ হবে।
বাংলাদেশের ছয় প্রতিযোগী ছাড়াও এবারের আয়োজনে আরও যাচ্ছেন গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার, সাবেক আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড দলের সদস্য আসিফ-ই-এলাহি, তাহনিক নূর সামীন এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক বায়েজিদ ভুঁইয়া।