মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, আইনের কারণে কমিশন সরাসরি কিছু করতে পারছে না। আইন সংশোধন হলে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে পারবেন এবং কমিশনও শক্তিশালী হবে।
আজ বৃহস্পতিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উদ্যোগে অনলাইনে আয়োজিত ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও মানবাধিকারকর্মীদের সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নাছিমা বেগম বলেন, ‘কমিশন কখনোই চায় না মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটুক। কমিশন কখনো বলেনি যে সে হাত–পা বাঁধা। যতটুকু আইনি সক্ষমতা আছে, ততটুকু নিয়ে সাধ্যমতো কাজ করছে কমিশন।’
নাছিমা বেগম বলেন, কমিশনের আইনে বড় দুর্বল জায়গা রয়েছে। আইনে কমিশন সরকারি অন্য যেকোনো সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারলেও কিন্তু ১৮(২) ধারা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটলে সে ক্ষেত্রে কমিশন শুধু প্রতিবেদন চাইতে পারবে। নিজেদের তদন্ত করার সুযোগ নেই।
গণমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা একটা জিনিসই মনে করেন, গুম–খুনের বাইরে কমিশনের আর কোনো কাজ নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কমিশন কাজ করতে পারে। কিন্তু সবার চোখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়গুলো এবং যেখানে কমিশনের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা সেই সংশোধন চাইছি।’
নাছিমা বেগম আরও বলেন, কমিশন নানা কিছু নিয়ে কাজ করে কিন্তু সেগুলো নিয়ে সেভাবে কেউ চিন্তা করে না। কমিশনের ভালো কাজগুলোর প্রচার হয় না বলে জানান।
কমিশনের নানান কাজের কথা উল্লেখ করে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে জানানোর জন্য এবং শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য কমিশন রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া অনলাইনে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা গড়ে তুলছে কমিশন।
আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির এই বছরে দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ১০টি পত্রিকা থেকে জানুয়ারি–নভেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা এ প্রতিবেদন করেছেন। সেখানে বলা হয়, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৬৭ জন ও কারা হেফাজতে ৭৮ জন মারা যান, গুমের শিকার ৬ জন, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যা ১৪ জনকে, গণপিটুনিতে ২৮ জনের মৃত্যু, ১৯৮ জন সাংবাদিককে হয়রানি, রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩০ জন নিহত, ১৪৪ ধারা জারি হয় ১৮ বার, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতায় আহত ৩০১ জন, শিশু নির্যাতন ১ হাজার ৩৪৮ জন ও নিহত ৫৪৭ জন শিশু, পারিবারিক সহিংসতা ২১৩ জন নারীর মৃত্যু এবং ধর্ষণের শিকার ১ হাজার ২৪৭ জন, অ্যাসিড–সন্ত্রাসের ঘটনা ২২টি, গৃহকর্মীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ৪১টি।
আসকের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল বলেন, মানবাধিকার কমিশনের কাছে কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশা অনেক বেশি। কমিশন তার কাজের বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে শেয়ার করলে ভালো হয়। কমিশনের প্রতিবেদনগুলো শেয়ার করলেও সবাই তা জানতে পারে।
মনোয়ার কামাল আরও বলেন, মানবাধিকার কমিশন অনেক কিছু করে। কিন্তু রচনা প্রতিযোগিতা, সচেতনতা তৈরি করা এগুলো সহজ কাজ। এগুলো অন্যান্য সংস্থা যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে, তারা করে দিতে পারবে। এগুলো অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে কমিশন যদি একা না পারে, সবাই মিলে একসঙ্গে যাবে এবং সোচ্চার হবে।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।