অস্ত্র মামলায় আওয়ামী লীগের সাংসদ হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে দেওয়া পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। গত ৫ জানুয়ারি এ মামলা থেকে ইরফান সেলিমের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে এই প্রতিবেদনটি পুলিশ জমা দেয়। আজ তা গৃহীত হওয়ায় এ মামলা থেকে ইরফান সেলিম অব্যাহতি পেলেন বলে জানিয়েছেন পিপি তাপস কুমার পাল।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এই প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেনের ২৬ নম্বরে রয়েছে ‘চান সর্দার দাদাবাড়ি’ ভবন। এই ভবনে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ কয়েকজন ব্যক্তি অবস্থান করছেন—এই খবরের সত্যতা যাচাই ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত বছরের ২৬ অক্টোবর র্যাবের ৮ থেকে ১০ জন সদস্য ঘটনাস্থলে যান। সেখানে অভিযান চালিয়ে র্যাব অস্ত্র–মাদকসহ ইরফান মো. সেলিম ও জাহিদুল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে।
অস্ত্র মামলায় অব্যাহতি পাওয়া ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এ মাসের ১৩ তারিখ আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
মামলার নথিপত্রের তথ্য বলছে, গত বছরের ২৫ অক্টোবর রাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়ি তাঁর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়িতে ছিলেন হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান এবং তাঁর লোকজন। ওয়াসিফ নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়িটিকে থামতে ইশারা করেন ও কথা বলতে চান। তখন তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন ইরফান ও তাঁর লোকজন। পরে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন ওয়াসিফ। এরপর শুরু হয় পুলিশ ও র্যাবের তৎপরতা।
পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে মোহাম্মদপুরে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন।
তিনি যখন ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে আসেন, তখন পেছন থেকে গাড়িটি তাঁর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। তখন তিনি নিজের পরিচয় দেন। তারপর গাড়ি থেকে নেমে এসে একজন তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান। এরপর সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড সিগন্যালে ওই গাড়ি দাঁড়ায়। তখন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান ওই গাড়ির জানালায় নক করেন। গাড়ির সবাই তখন নেমে আসেন। তখন পুনরায় তিনি নিজের পরিচয় দেন। তারপরও সবাই মিলে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে অতর্কিতভাবে হামলা করেন। লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।
সময় নৌবাহিনীর কর্মকর্তার স্ত্রী তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও ধাক্কা দেন। তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এলাকা ত্যাগ করেন। নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলে সাধারণ মানুষ ও সেখানে কর্মরত পুলিশ সদস্য তাঁকে উদ্ধার করেন। ওই সময় গাড়ির একজনের ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। তিনি হলেন মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এ বি সিদ্দিক।