আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে গত মঙ্গলবারের মধ্যে সেগুলো জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক অস্ত্রই জমা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় যাঁরা অস্ত্র জমা দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব (রাজনৈতিক শাখা) আরিফ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অস্ত্র উদ্ধারের প্রতিবেদন এখনো মন্ত্রণালয়ে আসা শুরু হয়নি। অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলছে। কিছুটা সময় লাগছে। তবে যাঁরা অস্ত্র জমা দেবেন না, তাঁদের তালিকা করে পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা পড়ার চিত্র বুঝতে দেশের চার অঞ্চল—চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও কুষ্টিয়ায় খোঁজ নেয় প্রথম আলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, কোনো এলাকাতেই শতভাগ অস্ত্র জমা হয়নি। যেসব অস্ত্র জমা পড়েনি, সেগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নামে নেওয়া লাইসেন্স করা অস্ত্রও রয়েছে।
সূত্র বলছে, সিলেটে গত ১৫ বছরে লাইসেন্স দেওয়া ২৪৬ অস্ত্রের মধ্যে ৩৬টি অস্ত্র এখনো জমা হয়নি। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি করে লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বর্তমানে লাইসেন্সধারীদের কাছে যেসব অস্ত্র আছে, সেগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এগুলো উদ্ধারে তালিকা ধরে অভিযান চালানো হবে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে কুষ্টিয়ায় মোট ২৬২টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইন্সেস দেওয়া হয়। ২০১০, ২০১২ ও ২০১৩ সালের দিকে সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের বেশির ভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। কিন্তু বেশ কয়েকটি অস্ত্র এখনো জমা পড়েনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল বা রিভলবার জমা দেননি। আতাউর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই।
রাজশাহীতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে লাইসেন্স করা ১৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব অস্ত্র জমা হয়নি। গত সাড়ে ১৫ বছরে চট্টগ্রামে লাইসেন্স পাওয়া বেসামরিক ব্যক্তিদের সব ধরনের অস্ত্র এখনো জমা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকেরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। কখনো কখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ অস্ত্র বলে দাবির ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাঁর আমলে দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।