জন্মনিবন্ধন সংশোধনে দেড় লাখের বেশি আবেদন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এম এ বিশ্বাস সবুজ। তিনি গত ২৭ জুলাই তাঁর ছেলের জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধনের জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আবেদন করেন।

২০১৫ সালে ছেলে খালিদ শাহরিয়ারের জন্মনিবন্ধন করেছিলেন সবুজ। তখন ছেলের নাম শুধু ‘খালিদ’ লেখা হয়েছিল। এখন পাসপোর্ট করার জরুরি প্রয়োজনে সবুজ তাঁর ১৩ বছর বয়সী ছেলের জন্মসনদ দ্রুত সংশোধন করতে চান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৮ জুলাই থেকে ১০ দিন দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া ছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সরকার পতনের পর ডিএনসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর ফলে সবুজের করা আবেদনটি আটকে যায়।

গত শুক্রবার সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনটি কী অবস্থায় আছে, তা জানার জন্য তিনি গত সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যান এবং গিয়ে দেখেন সেখানে কাজ বন্ধ।

‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’-এর তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৭টি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সংশোধনের আবেদন ঝুলে ছিল। এর মধ্যে ১৪২টি মৃত্যুনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন। বাকিগুলো জন্মনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন।

জন্মসনদ সংশোধনের আবেদনের মধ্যে ৬৪ জেলায় ঝুলে ছিল ২০ হাজার ১২৮টি। ৪৯৫টি উপজেলায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৩টি। আর বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস-মিশনগুলোর মাধ্যমে এসে ঝুলে থাকা আবেদনের সংখ্যা ছিল ৩৪টি।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডিএনসিসির ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হন এই সিটির অঞ্চল-৪-এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা তুফানী লাল রবি দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের জন্য নিবন্ধনকাজ বন্ধ ছিল। নিবন্ধন পেতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে বলে কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেই। তবে কেউ যদি আবেদনের বিষয়ে খোঁজ পাচ্ছেন না বলে মনে করেন, তাহলে কার্যালয়ে এলেই সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের যেসব কার্যালয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ আগে হতো, সেখানেই এখন নাগরিকদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

৬ অক্টোবর জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস উপলক্ষে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ হাজার ২৪৬টি নিবন্ধন কার্যালয়ের ১০ হাজার ৪৯২ নিবন্ধক ও নিবন্ধন সহকারীর মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৭৭ লাখ ২৪ হাজার। আর মৃত্যুনিবন্ধনের সংখ্যা ৭ লাখ ৪৫ হাজার। সনদ সংশোধনের সংখ্যা ২৫ লাখ ১৭ হাজার। প্রতিদিন গড়ে এক লাখ নাগরিক বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম (বিডিআরআইএস) থেকে সেবা নিচ্ছেন। সেবা নির্বিঘ্ন করার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে ২৫০ টেরাবাইট অতিরিক্ত স্টোরেজ কিনে সিস্টেমে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে নাগরিকদের জন্য এখন আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। বর্তমানে ডকুমেন্ট (নথিপত্র) আপলোডে স্টোরেজ ১০ গুণ বাড়িয়ে ২০০ কিলোবাইটের জায়গায় ২ মেগাবাইট করা হয়েছে। এই দুই পরিবর্তনের কারণে সিস্টেমের গতি স্বাভাবিক হয়েছে। নাগরিকেরা সহজে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন।

রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি মাসে জন্ম ও মৃত্যুর সনদ সংশোধনে দুই লাখের বেশি আবেদন আসে। সেই হিসাবে যে পরিমাণ আবেদন ঝুলে আছে, সেটাকে খুব বেশি বলা যায় না। ধারণা করা যায়, এই আবেদনগুলো দু-তিন মাসের বেশি পুরোনো নয়। নাগরিকেরা যেন সহজে সেবা পান, সে জন্য সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কাজে গতি এসেছে। সংশোধনের কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ফলে স্থানীয় পর্যায় থেকেই সনদ সংশোধন করা হচ্ছে। আগের চেয়ে সংশোধনের আবেদন জমে থাকার হার এখন অনেক কমেছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। কিন্তু বিডিআরআইএসে জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা প্রায় ২৩ কোটি। বিদ্যমান বিডিআরআইএস থেকে আগের সিস্টেমের (বিআরআইএস) দ্বৈত, অসম্পূর্ণ, ভুল, বিশৃঙ্খল ডেটা দূরীভূত করে একটি শুদ্ধ ডেটাবেজ তৈরি করা কার্যালয়ের বড় চ্যালেঞ্জ। বিডিআরআইএসের ডেটা ক্লিনজিং, ডেটা ডি-ডুপ্লিকেশন করার জন্য সরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন।

ডিএনসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ বলেন, ‘ছেলের জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধন আবেদনটি যে কী অবস্থায় আছে, তা জানি না। নতুন করে আবেদন করতে হবে কি না, তা-ও জানি না। সংশোধিত জন্মসনদ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত পাসপোর্টও করতে পারছি না।’