ফ্যাসিস্ট–বিরোধিতার পুরস্কার হিসেবে তাঁর কোনো পদের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেছেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট–বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। নিশ্চয়ই এই পদের জন্য নয়।’
আজ সোমবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টের দোসর কি না, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর, হ্যাঁ, বলতে পারেন, বলতে ভালো লাগতে পারে; যাঁরা বলছেন। কিন্তু আমি এমনই দোসর যে ২০১৫ সালে একটা লেখা লিখেছিলাম—কিন্তু এবং যদির খোঁজে। যখন শাহবাগীদের কারণে “কিন্তু এবং যদি” বলা নিষিদ্ধ ছিল। ওই লেখা লেখার চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তৎকালীন সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন সেল আমার সব ট্যাক্স ফাইল তলব করেছে।’
এত দিন এ ঘটনা কেন বলেননি, তার ব্যাখ্যা দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমার প্রয়োজন নেই সিম্প্যাথি (সহানুভূতি) নেওয়ার। ২০১৫ সালে আমাকে এসবের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমার তো বলার প্রয়োজন নেই যে আমি ভাই ফ্যাসিস্টবিরোধী, সুতরাং আমাকে এই দায়িত্বটা দাও।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, উপদেষ্টার দায়িত্বটা তখনই নিতে রাজি হয়েছেন, যখন মনে করেছেন যে তিনি কাজটা হয়তো করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘আমি ফ্যাসিস্টবিরোধী কি না, তার পুরস্কার হিসেবে আমার কাজ প্রয়োজন নেই। আমি ফ্যাসিস্টদের বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। নিশ্চয়ই এই পদের জন্য নয়। আপনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন, আমি মারা গেলে মন্ত্রী হিসেবে কেউ আমাকে মনে রাখবে না, মনে রাখবে ফিল্মমেকার (চলচ্চিত্র নির্মাতা) হিসেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমার আত্মগ্লানি কেন হবে? আমি কী করেছি বলে আমার আত্মগ্লানি হবে বলে আপনি মনে করেন? আমি উসকানিমূলক কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘দেখেন, আমি উপদেষ্টা হওয়ার আগে অনেক চিন্তা করেছি দায়িত্ব নেব কি নেব না। আমি গতকাল (রোববার) সকাল পর্যন্ত “না” ছিলাম। তারপর আমি “হ্যাঁ” বলেছি। কারণ, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে অনেক আগে থেকে কাজের সম্পর্ক আছে। আমি ওনার কাজ সম্পর্কে জানি। আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি এই সুযোগে কিছু করা যায়। আমরা যখন চলে যাব, তখন দেশের মানুষ যদি বলে অন্তত এই দুইটা কাজ করে গেছে, যার সুফল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভোগ করছে। তাহলে আমি খুবই আনন্দিত হবে। সে কারণে আমি দায়িত্ব নিয়েছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রত্যেকে নিজের মতামত দিতে পারেন। এসবের উত্তর দেওয়ার দরকার নেই বলে মনে করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে বলতে পারি, ২০২৩ সালের পর আমি ছিলাম “ছাগু জামায়াতপন্থী”। আওয়ামী লীগের যতগুলো পেজ ছিল, তারা আমাকে বলত “ছাগু” এবং “জামায়াতপন্থী”। কারণ, ২০১৪ সালে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম যে “এই চেতনা লইয়া আমরা কী করিব”। সেখানে আমি বলেছিলাম, যে আমি সংস্কৃতি করতে গিয়ে দেখলাম শবে বরাত আর ঈদ নিয়ে কথা বলা যাবে না। কিন্তু পূজায় যাওয়া যাবে, বড়দিনে যাওয়া যাবে। ফলে আমাকে কেউ মনে করে বিএনপি, জামাতি। কেউ মনে করে আমি আওয়ামী লীগার।’
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত—সবাই গালি দেয় মন্তব্য করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আপনাকে আপনার কমনসেন্স অ্যাপ্লাই (সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ) করতে হবে। একটা লোককে একই সঙ্গে চার পার্টি কেন গালি দেবে। চার পার্টি মনে করছে, সে কারও লোক নয়। কারণ, আমি কারও লোক নই। আমি আমার লোক। আমি যেটাকে যে মুহূর্তে ঠিক মনে করি, ওই মুহূর্তে ওই কথা বলি। আমার কারও প্রতি কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। কখনো ছিল না, কোনোকালে থাকবেও না। কারণ, আমি শিল্পী। আমার কোনো দল নেই।’