নগরের মুন্সী পুকুরপাড় এলাকায় জেলা কার্যালয়টি অবস্থিত। দলটির নেতৃত্বে দিচ্ছেন চট্টগ্রামের সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী।
নগরের পাঁচলাইশ কাতালগঞ্জ হয়ে মুন্সী পুকুর পাড়। এটির দক্ষিণ পাড়ে প্রায় ৭০০ গজ গেলেই মাইজভান্ডার মঞ্জিল নামের সুরম্য ভবন। গতকাল বিকেলে ভবনটির প্রধান ফটকের কড়া নাড়তে একজন নিরাপত্তারক্ষী দরজা খুলে দেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দেওয়ার পর তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে দেন। সেখানে দেখা যায়, ডান পাশে তিনতলা সুরম্য ভবন। নিচতলায় গ্যারেজ, যেখানে কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। আর বাঁ পাশে দোতলা ছোট্ট একটি ভবন। ভবনটির দেয়ালে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চট্টগ্রাম জেলা ও পাঁচলাইশ থানা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড রয়েছে।
ইতিমধ্যে এই প্রতিবেদককে এগিয়ে নিতে আসেন জহিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনতলা ভবনটিতে থাকেন বিএসপির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। তিনি এখন নেই। ঢাকায় আছেন।
দোতলা ভবনের নিচতলায় দলের পাঁচলাইশ থানা কার্যালয়। এর দরজায় তালা দেওয়া। ভেতরে চেয়ার–টেবিল ও কিছু ফাইলপত্র রয়েছে। পরে দোতলায় (ভবনের সঙ্গে লাগানো লোহার সিঁড়ি) দিয়ে জেলা কার্যালয়ে উঠে দেখা যায়, সেখানেও দরজায় তালা। জহিরুল ইসলাম তালা খুলে দিয়ে প্রতিবেদককে সেখানে বসতে দেন। কার্যালয়টিতে ছোট দুটি কক্ষ রয়েছে। একটিতে চেয়ার–টেবিল ও ফাইলপত্র। আরেকটিতে ফাইলপত্র ও সংগঠনের কাগজপত্র রয়েছে। দেয়ালে টাঙানো রয়েছে দলের চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ও তাঁর বাবা শাহ সুফি সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভান্ডারীর দুটি ছবি।
দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলো তাদের শর্ত না মানলে নির্বাচনে অংশ নেবেন না জানিয়েছেন। অতীতে আমরা দেখেছি নামমাত্র রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে বিরোধী দল সাজানো হয়।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী
ইতিমধ্যে সেখানে হাজির হন আগার খান নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে দলের পাঁচলাইশ থানা সহসভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৫ মাস আগে ২৭ সদস্যের পাঁচলাইশ থানা কমিটি গঠিত হয়। তাঁর বাবা দলের চেয়ারম্যানের মুরিদ ছিলেন। তিনিও মুরিদ। এখন যেহেতু রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, তাই সেখানে যুক্ত হয়েছেন। এর আগে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
পেশায় বাবুর্চি আগার খানের সঙ্গে কথা বলার প্রায় ২৫ মিনিট পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেখানে হাজির হন দলের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া। এরপর একে একে হাজির হন জেলার সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক মহিবুল্লাহ চৌধুরী, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান।
চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ৪১ সদস্যের চট্টগ্রাম জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে দুই বছর আগে। তাঁদের কমিটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপির সাবেক নেতাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন রয়েছেন। তিনি নিজেও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
পার্টির জেলা তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শাহজাদা মিজানুর রহমান ২০ বছর আগে নগরের পাহাড়তলী ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে চেয়ারম্যানের সঙ্গে নানা সামাজিক ও ধর্মীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর কাজগুলো ভালো লাগায় এবার রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
জেলার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ভুঁইয়াও আগে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলেন না। আঞ্জুমানে রহমানিয়া মঈনীয়া মাইজভান্ডারীর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এবার রাজনৈতিকভাবে যুক্ত হয়েছেন আরও বেশি কাজ করার জন্য।
দলটির নেতারা জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা বিএসপির যাত্রা শুরু হয়।
আগামী সংসদ নির্বাচনে দুই শ থেকে আড়াই শ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে দলের নিবন্ধন পেয়েছি। সোমবার গেজেটও হয়েছে। জোট করার জন্য ইতিমধ্যে অনেকে ডাকছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। দেখা যাক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিতে বিশ্বাসী আমরা।’
নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, খতিয়ে দেখা দরকার মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলো তাদের শর্ত না মানলে নির্বাচনে অংশ নেবেন না জানিয়েছেন। অতীতে আমরা দেখেছি নামমাত্র রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে বিরোধী দল সাজানো হয়।’