‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। আজ শনিবার ঢাকা চেম্বারের অডিটরিয়ামে
‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। আজ শনিবার ঢাকা চেম্বারের অডিটরিয়ামে

চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়া কমাতে স্বাস্থ্যসেবার মান ও আস্থা বাড়াতে হবে

বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিবছর বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। এতে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান ও আস্থা বাড়াতে হবে, যাতে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাওয়া কমে।

‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সেমিনারে আজ শনিবার এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অডিটরিয়ামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা চেম্বার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়েছে।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। তিনি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে উন্নত অবকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, বাজেট সহায়তা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক হাসপাতালের কার্যক্রম বাংলাদেশে চালু করা, বিদেশি ডাক্তার ও নার্সদের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার নিবন্ধন সহজ করা, স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও নবায়নের প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

মূল প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ হাজার ৪৬১ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। পাশাপাশি ৩৬টি বিশেষায়িত হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি ঢাকায়। এ কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত ঢাকার ওপর চাপ বাড়ছেন।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা, চিকিৎসাব্যবস্থায় আস্থার স্বল্পতা, সর্বোপরি স্বস্তির অভাবে অসংখ্য লোক দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। সমস্যাগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করা ও সমাধানের মাধ্যমে রোগীদের বিদেশমুখিতা কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. লিয়াকত হোসাইন বলেন, উন্নত সেবা দিতে রোগীদের প্রতি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তন একান্ত অপরিহার্য। দেশীয় চিকিৎসক ও নার্সদের দক্ষতা উন্নয়নের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনের কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত একটি মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। তিনি স্বাস্থ্য প্রশাসনকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য সিভিল সার্ভিস থেকে বাদ দিয়ে পৃথক স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রস্তাব দেন।

বিএসএমএমইউর প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাকে স্বাস্থ্যসেবা-পর্যটনে রূপান্তর করতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের সেক্রেটারি আবুল বাসার মো. জামাল বলেন, বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৪ হাজারের মতো চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ৩৩ হাজার সরকারি। তবে এটা সন্তোষজনক যে এখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের সেক্রেটারি জেনারেল মীর সাদউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোভিডের সময় কেউ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাননি। মহামারির সেই সময়ে আমরা পরিস্থিতি সামলাতে পেরেছি—এটা স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমাদের সক্ষমতা প্রতিফলিত করে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।