সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে বলে মনে করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, এ জন্য একটি জাতীয় সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। নব্বইয়ে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংবাদমাধ্যম কতটা ব্যর্থ বা সফল হয়েছে, তা মূল্যায়নের আহ্বানও জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের মতবিনিময় সভায় বলা হয়, সংবাদমাধ্যম যাতে হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে নির্ভয়ে কাজ করতে পারে, সে জন্য প্রেস কাউন্সিলকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, তাঁরা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। কারণ, কমিশনের সবাই মুক্ত গণমাধ্যমের পক্ষে। তিনি বলেন, আইনগত, পেশাগত ও বাস্তবসম্মত কাঠামোর সুপারিশ প্রয়োজন।
সাংবাদিকতার কারণে কোনো সাংবাদিককে সরাসরি গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে মত দেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, সমন জারি করে প্রাথমিক শুনানির পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইউনিয়নের দলীয়করণের কারণে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্রের সমস্যার দায় প্রথমত সংবাদপত্রের নিজের। সংবাদপত্রকে টেকসই হতে হবে। দলনিরপেক্ষ হতে হবে। আর্থিকভাবে টেকসই করতে হবে।
গণমাধ্যমের সবাইকে সাধারণভাবে ব্যর্থ বলা যাবে না বলে মনে করেন নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর। তিনি বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯-এ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে বলা আছে, এটি আইনের দ্বারা আরোপিত শর্তসাপেক্ষ। আইনের দুটি ধারা আছে, একটা ন্যায্য ও অন্যায্য। এ বিষয়টি স্পষ্ট করার সুপারিশ থাকা দরকার।
কালো আইন মোকাবিলায় সম্পাদক পরিষদের ভূমিকাকে কৃতিত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন বণিক বার্তার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে সম্পাদকেরা রাজপথে নেমেছিলেন। নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তারপরও তাঁরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, কিছু সাংবাদিক নেতার লোভ এবং বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কারণে অনেক ক্ষেত্রে পাঠক বিশ্বাস হারিয়েছেন।
গণমাধ্যম সংস্কারের কাজ সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করেন যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম। সংস্কারের কাজ কারা বাস্তবায়ন করবেন। গণমাধ্যমে বিনিয়োগের উৎস কী, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে বিনিয়োগের বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীর স্বার্থের বাইরে যাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন।
মতবিনিময় সভায় আজকের পত্রিকার সম্পাদক মো. গোলাম রহমান, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন ও সংবাদ-এর নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের ও দৈনিক করতোয়ার সম্পাদক মোজাম্মেল হক।
আরও উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, কামরুন্নেসা হাসান, ফাহিম আহমেদ, জিমি আমির, মোস্তফা সবুজ ও টিটু দত্ত গুপ্ত।