স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল কনকর্ড

১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশ বাংলাদেশ। দেশজুড়ে চলছে পুনর্গঠন-পুনর্বাসনের কাজ। ঠিক সে সময় ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কনকর্ড। যুদ্ধবিধ্বস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি সেতু পুনর্নির্মাণ দিয়ে শুরু হয় কনকর্ডের যাত্রা।

দেশ গড়ার অব্যাহত সেই যাত্রায় আজ ১ হাজার ২০০-এর বেশি প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কনকর্ডের নাম। মতিঝিলের ২০ তলা শিল্পব্যাংক ভবন, ২২ তলা জীবন বীমা ভবন, জনতা ব্যাংকের ২৪ তলা প্রধান কার্যালয়—এর সবই সেই আশি ও নব্বই দশকের মধ্যে কনকর্ড নির্মিত আধুনিক ঢাকার আত্মপ্রকাশের বনিয়াদ।

কনকর্ডের অন্যতম গৌরবময় কীর্তি হচ্ছে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ। এ ছাড়া কনকর্ডের নির্মাণ তালিকায় আছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের সদর দপ্তর, তিতাস গ্যাস ভবন, টিঅ্যান্ডটি সদর দপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশনের চ্যানেল ট্রান্সমিশন ভবন ও মিলনায়তন, ময়মনসিংহ ও নাটোরের টেলিভিশন রিলে স্টেশন, বাংলাদেশ টিঅ্যান্ডটি বোর্ডের প্রশাসনিক ভবন (বিটিটিবি ভবন), বাংলাদেশ কলেজ অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড সায়েন্স কমপ্লেক্স, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ভিভিআইপি টার্মিনাল ভবন, পেট্রো সেন্টার, গ্যাস ও মিনারেল করপোরেশন (বিওজিএমসি), সিআইবিএ-জিইআইজিওয়াইএর ফার্মাসিউটিক্যাল প্ল্যান্ট, ব্রিটিশ হাইকমিশন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন, ব্র্যাক সেন্টার, মিরপুর জাতীয় ইনডোর স্টেডিয়াম, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ভবন, বাংলাদেশ শিল্প সংস্থা ভবন, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল কার্ডিয়াক ইউনিট (ডিএবি), নিটল সেন্টার, রেড ক্রিসেন্ট কনকর্ড টাওয়ার, পরিসংখ্যান ভবনসহ অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্মকর্তাদের বাসভবনের কাজটি ছিল সেই সময়ে কনকর্ডের সরকারি প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। পরবর্তী সময়ে বঙ্গভবন সংস্করণ (রাষ্ট্রপতির বাসস্থান), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রসহ অনেক সরকারি স্থাপনার কাজ সুনামের সঙ্গে সম্পন্ন করে কনকর্ড।

দেশের নির্মাণশিল্পে নেতৃত্বদানকারী শিল্পপরিবার কনকর্ডের ‘প্রথম’ হিসেবে অনেক অর্জনও রয়েছে। যেমন পরিবেশবান্ধব নির্মাণ-উপকরণ কংক্রিট ব্লক তৈরি ও ব্যবহারকারীর দিক থেকে কনকর্ড বাংলাদেশে প্রথম। তারা নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের প্রথম দূষণমুক্ত স্যাটেলাইট সিটি—লেক সিটি কনকর্ড। প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিঙ্গাপুরে ৭২০ ফুট সুউচ্চ ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। চট্টগ্রামে নির্মাণ করেছে দেশের প্রথম ঘূর্ণমান রেস্টুরেন্ট। কনকর্ড বাংলাদেশে প্রথম আরসিবিএম প্রযুক্তি পরিচিত করে যার মাধ্যমে তৈরি হয় ভূমিকম্প সহনশীল সুউচ্চ ভবন।

মেগাসিটি ঢাকার চাপ সামলানোর পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দিতে ঢাকার খিলক্ষেতে কনকর্ডের মেগা প্রজেক্ট স্যাটেলাইট টাউন  লেক সিটি কনকর্ড। এটি দেশের প্রথম এবং অত্যন্ত সফল স্যাটেলাইট টাউনশিপ। ৬৩ দশমিক ৮৯ বিঘা জমিতে নির্মিত এই মেগা টাউনশিপ প্রজেক্টে রয়েছে ১৮টি ভবন, আধুনিক শপিং মল, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—লেকসিটি কনকর্ড স্কুল, দ্বিতল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নান্দনিক লেক সিটি কনকর্ড জামে মসজিদ, শিশুদের খেলার মাঠসহ বয়স্কদের জন্য হাঁটার পথ, পার্ক, পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা জিমনেসিয়াম, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎসহ সব আধুনিক নাগরিকসুবিধা। লেকসিটিতে প্রথম আকুয়া বায়োপ্ল্যান্ট টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনগুলোতে মনোমুগ্ধকর এবং নান্দনিক জ্যামিতিক নকশা নজর কেড়েছে সবার। রয়েছে সবুজের পর্যাপ্ত সমারোহ। নিরাপত্তা এবং নাগরিক সব সুবিধাসংবলিত লেকসিটি কনকর্ড আক্ষরিক অর্থেই দূষণমুক্ত। লেক সিটি কনকর্ডে ২০০৫ সাল থেকে ৮ হাজারের বেশি মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছে। কনকর্ড চন্দ্রিমা লেক সিটির আধুনিক ও নান্দনিক সংযোজন, যেখানে রয়েছে নিজস্ব জিম, অভিজাত রিসেপশন লবি, রুফটপ, গ্রিন গার্ডেন, ওয়াকিং ট্র্যাক, বাচ্চাদের প্লে-জোন। সর্বোপরি আধুনিক, নিরাপদ এবং দূষণমুক্ত নগরী লেক সিটি কনকর্ড নাগরিক বসবাসের জন্য একটি আদর্শ ঠিকানা।

বাংলাদেশের নির্মাণশিল্পে কনকর্ড স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। এ দেশের রিয়েল এস্টেট খাতে বিশেষ অবদান রেখে দেশকে আরও উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছে কনকর্ড।