যাপিত জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ ফ্রিজের ওপর নির্ভরতা এখন অনেকখানিই। রোজকার ব্যস্ত জীবনে একরকম বাধ্য হয়েই কয়েক দিনের বাজার করে রাখতে হয় ফ্রিজে। কিন্তু সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের জন্য বিষয়টা স্বাভাবিক হলেও শিশু, রোগী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ফ্রিজে রাখা খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খেতে হলে মানতে হবে কিছু স্বাস্থ্যবিধি, রয়েছে গর্ভবতী নারীদের জন্যও কিছু নির্দেশনা। কোন খাবার কাকে খাওয়ানো যাবে এবং এদের জন্য কীভাবে সংরক্ষণ করলে খাবার তুলনামূলক ভালো থাকে—এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার।
শিশু, রোগী ও বয়স্কদের রান্না করা এবং কাঁচা—দুই রকমের খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। এদের জন্য ফ্রিজে কাঁচা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি এক রকম, আবার রান্না করা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি আরেক রকম। এ দুই ধরনের খাবার ফ্রিজে আলাদা করে রাখা উচিত। এদের জন্য খাবার রাখার সময় ফ্রিজের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কমাবেন এবং বাড়িয়ে দেবেন।
বয়স্ক বা শিশুদের জন্য খাবার যদি আপনি বাক্সে করে রাখতে অভ্যস্ত হন, তাহলে বাক্সগুলোর মধ্যে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখবেন। তাহলে ভেতরে বাতাস চলাচল করতে পারবে। অনেকে রোগীর জন্য মাসের পর মাস ডিপ ফ্রিজে মৌসুমি ফলমূল রেখে দেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সংরক্ষণের নিয়মাবলি মেনে তারপর রাখতে হবে। দীর্ঘদিন ফ্রিজে খাবার রাখার ফলে খাবারের পুষ্টি তো নষ্ট হয়ই, সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যায়। মাংস রাখতে চাইলে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করাই যৌক্তিক। এর বেশি হলে তাদের না খাওয়ানোই উচিত। আর ১৫ দিনের বেশি ফ্রিজে রাখা মাছ না খাওয়ানোই ভালো। ফ্রিজে রাখা যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে দেখে খাওয়া উচিত। বিশেষ করে বয়স্ক, রোগী ও শিশুদের। তা ছাড়া ফ্রিজে রাখার পর যদি কখনো কোনো খাবারের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে সে খাবার কারোরই খাওয়া উচিত নয়।
ফ্রিজে যেকোনো ধরনের শাক বা সবজি রেখে বেশি দিন খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এ উপকরণগুলো অধিক পচনশীল। যতক্ষণ ফ্রিজে থাকে, সেগুলো ভালো থাকে, ফ্রিজ থেকে বের করলেই নেতিয়ে পড়ে। এগুলো টাটকা খেয়ে ফেলা উচিত। শাক যতই পুষ্টিগুণসম্পন্ন হোক না কেন, ফ্রিজে রাখা শাক বা পাতা অল্প বয়সী বা বয়স্কদের না খাওয়ালেই ভালো হয়। অনেক রোগীকে যাদের পথ্য হিসেবে বিভিন্ন সবজি খেতে বলে। তাই সবজি হলে বাইরে এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। রোগীদের খাওয়ানোর জন্য তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি ফ্রিজে রাখবেন না। এতে এগুলোর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দ্রুত ভেঙে যায়। তবে তরমুজ কেটে চার ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে। এর বেশি না রাখাই ভালো। আর ছোটদের জন্য রান্নায় ব্যবহৃত তেল স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই ভালো থাকে। তবে বাদামসহ অন্য তেল ফ্রিজে রাখতে পারেন।