শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ফিরে তাঁর প্রথম বক্তৃতাতেই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে তাঁর প্রথম কাজ। কারও ওপর কোনো হামলা যাতে না হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন।’ তিনি ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেরেন ড. ইউনূস। তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, অন্য দুই বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এরপর তিনি বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আজকে আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করল তরুণেরা, সেটাকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটা সম্ভব করেছে, যে তরুণসমাজ, তাদের প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। নতুন করে জন্ম দিয়েছে।
এ সময় ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমার আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক।’ আবু সাঈদের কথা বলার সময় অধ্যাপক ইউনূস কেঁদে ফেলেন।
অধ্যাপক ইউনূস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে হবে। স্বাধীনতার অর্থ হলো দেশ তোমাদের হাতে। তোমাদের মনের মতো করে গড়তে পারো। পাল্টে ফেলতে পারো। পুরোনোদের বাদ দাও। তোমাদের মধ্যে সৃজনশীলতা আছে, তাকে কাজে লাগাও।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘সরকার হয়ে উঠেছিল দমন–পীড়নের একটি যন্ত্র। এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষ উৎফুল্ল হবে। যে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। আমাদের সারা বাংলাদেশ একটি পরিবার। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সবাইকে রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের প্রথম কাজ।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আবেদন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, তবে দেশের কারও ওপরে হামলা হবে না। বিশৃঙ্খলা থেকে, সহিংসতা থেকে রক্ষা করুন। কোনো গোলযোগ যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
এদিকে আজ রাত সাড়ে আটটায় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ হবে বলে জানা গেছে। এই সরকারের সদস্য ১৫ জনের মতো হতে পারে বলে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত সোমবার।