শেখ আবির হোসেন
শেখ আবির হোসেন

আবিরের পরিবারের জন্য ৩ দিনে জমা হলো ৭২ লাখ টাকা

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি শেখ আবির হোসেনের পরিবারের জন্য ৩ দিনে প্রায় ৭২ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন সারা বিশ্বের মানুষ।

টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা শেখ আবিরের পরিবারের জন্য ফেসবুকে ‘গো ফান্ড মি’ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সারা বিশ্বের প্রায় ১ হাজার ৬০০ মানুষ তাঁর পরিবারের জন্য ৬৫ হাজার ডলার (প্রায় ৭২ লাখ টাকা) অনুদান দিয়েছেন।

লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম এই অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সহকর্মী আবির সম্পর্কে তিনি বলেন, আবির পরিচিত-অপরিচিত সবার জন্য সব সময় পজিটিভ চিন্তা করতেন। সহযোগিতা করার চেষ্টা করতেন।

বাংলাদেশ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোনো ছাত্র এলে নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। এ জন্য তাঁর প্রতিদান দিয়েছে ভালোবাসা দিয়ে, নাম না জানিয়ে অসংখ্য মানুষ হাজার ডলার পর্যন্ত অনুদান দিয়েছেন। আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক আবিরের প্রতি সারা বিশ্বের মানুষ যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা অভাবিত।

তহবিলে টাকা জমা পড়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শেখ আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম মজুমদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মানুষের ভালোবাসায় তিনি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তাঁর স্বামীকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না।

সানজিদা স্বামীর মরদেহ আনতে নিউইয়র্ক থেকে টেক্সাসে গেছেন। ছুটির মৌসুমের কারণে এখনো ময়নাতদন্ত হয়নি। তিনি আশা করছেন, আজ আবিরের মৃত্যুসনদ ও মরদেহ পেয়ে যাবেন।

টেক্সাসে রাব্বি খানের সঙ্গে থাকতেন আবির। রাব্বি বলেন, নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতেন।

দোকানে আবিরের ভারতীয় সহকর্মী রিয়া ইগনার বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার সঙ্গে তিনি ভালো ব্যবহার করতেন। কখনো কোনো কাস্টমারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখিনি।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে আবির। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিষয়ে। একই বিষয়ে পড়ালেখা করা দুই বছরের বড় সাতক্ষীরার মানুষ রেজাউল করিম বলেন, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে সব সময় এগিয়ে আসতেন আবির। নতুন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতেন।

গত শুক্রবার টেক্সাসের বিউমন্টের একটি দোকানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন শেখ আবির হোসেন। আবিরের মেজ ভাই শেখ জাকির হোসেন গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, আবির ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। আবিরের স্ত্রী সানজিদা একমাত্র শিশুকন্যা আরশিয়াকে (২) নিয়ে নিউইয়র্কে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন।