হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামে থাকা লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরি হয়ে গেছে। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে সুরক্ষিত স্থান থেকে কীভাবে এমন চুরির ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সোনা চুরির চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে শনিবার। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় আজ রোববার। এ ঘটনায় শুল্ক বিভাগ একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
শুল্ক বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, চুরি হওয়া এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এত দিন ধরে এত পরিমাণ সোনা বিমানবন্দরের গুদামে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে শুল্ক বিভাগে দুটি গুদাম বা লকার রয়েছে। এর মধ্যে নিচতলায় শুল্ক বিভাগের স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের বের হওয়ার পথে তল্লাশি টেবিলের পাশে ছোট একটি লকার আছে। সেখানে মূলত তল্লাশির সময় তাৎক্ষণিকভাবে জব্দ করা পণ্য রাখা হয়। তবে সোনা বা বেশি মূল্যবান সামগ্রী হলে সেটা নিচতলায় ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার পাশেই শুল্ক হাউসের গুদামে নিয়ে রাখা হয়। গুদামের ভেতর আলাদা লকার রয়েছে। সোনা রাখার একটি লকার থেকে ৫৫ কেজি সোনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গুদামে অনেকগুলো লকার থাকলেও সোনা চুরি হয়েছে একটি লকার থেকে। এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে।এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ, ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, তাদের ধারণা, এক দিনে নয়, বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে সোনা সরানো হয়েছে। এর সঙ্গে ভেতরের লোকজন জড়িত।
শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের ওই গুদাম পাহারায় ২৪ ঘণ্টায় চারটি পালায় (শিফট) তাদের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন। শনিবার সকালে গুদামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মী গুদামে ঢুকে চিৎকার শুরু করেন। এরপর জানা যায়, লকার ভেঙে সোনা চুরি হয়েছে।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, গুদামে অনেকগুলো লকার থাকলেও সোনা চুরি হয়েছে একটি লকার থেকে। এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি গুদামে অটোমেশনের কাজ শুরু করি। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনায় আমি লজ্জিত ও বিব্রত।’
এই কর্মকর্তা জানান, আট দিন আগে গুদামটি অটোমেশনের কাজ শুরু হয়। এ কাজের অংশ হিসেবে গুদামে থাকা সোনা গণনার কাজ শুরু হয়। তাঁর ধারণা, সোনা চুরির ঘটনা আগেই ঘটেছে। গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হওয়ায় সেটা ধরা পড়বে; তাই লকার ভাঙার ‘নাটক’ তৈরি করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, তাদের ধারণা, এক দিনে নয়, বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে সোনা সরানো হয়েছে। এর সঙ্গে ভেতরের লোকজন জড়িত।
দীর্ঘদিন শুল্ক বিভাগে কাজ করেছেন এনবিআরের এমন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে চোরাচালানের সোনা উদ্ধার হলে সেটা জব্দতালিকা করে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পাঠানো হয়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিতে হয়, এরপর তারা সময় দিলে সেদিন কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সেখানে পৌঁছানো হয়। সাধারণত এক-দুই দিনের মধ্যে পাঠানো হয়। এর বাইরে যাত্রীদের আনা (ব্যাগেজ রুলের আওতায়) সোনার ঠিকভাবে শুল্ক পরিশোধ করতে না পারলে বা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি আনলে সেটা ছাড়িয়ে নেওয়ার আগপর্যন্ত ওই গুদামে রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতা বা আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সোনা ছাড়িয়ে নিতে কারও কারও কয়েক মাস লেগে যায়। সাত-আট মাস বা এক বছরও লেগেছে, এমন ঘটনাও রয়েছে। কিন্তু চুরি হওয়া সোনার মধ্যে দু-তিন বছর আগের সোনাও ছিল বলা হচ্ছে। এত দিন রাখাটা স্বাভাবিক নয়।
এ ছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। পুরো বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়ার বিষয়টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। এমন একটি জায়গা থেকে কিছু চুরি হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তিনি বলেন, সোনা চুরির এই ঘটনায় পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে এই ঘটনায় কারা জড়িত, সেটা বের করা হবে।