ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন
ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছেন। বুধবার দুপুরে ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি, কোরিয়া পরিচালিত প্রকল্প, চুক্তি, প্রযুক্তি বিনিময়সহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেক বাংলাদেশি পণ্যকে অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা দেওয়া এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশকে সাতটি বিলাসবহুল গাড়ি দেওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির (ইপিএ) মতো দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাকে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে বর্ণনা করে দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির ওপর আলোকপাত করেন এবং হালকা প্রকৌশল, ইলেকট্রনিকস, গার্হস্থ্য কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগকে স্বাগত জানান।

চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ কোরিয়ার আন্তুর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাকে (কোইকা) ধন্যবাদ জানান এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থার অনুরোধ করেন।

কোরিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে আলোচনায় কোরিয়ার এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) স্কিমের অধীন বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের জন্য কোটা বাড়ানোয় কোরিয়াকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক জানান, ভাষা শেখার সমস্যার কারণে বাংলাদেশ গত বছর ১০ হাজার ২০০ জনের কোটা পূরণ করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়টির সমাধানকল্পে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে দুটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) মনোনীত করেছে, যেখানে কোরিয়ার প্রশিক্ষকেরা ভাষা ও প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন।

‘ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা ঘাপটি মেরে আছে’
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান রাজনীতিতে একজন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা ঘাপটি মেরে আছে। তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে, কখন ছোবল মারবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জিল্লুর রহমান পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে আজকের রাজনীতিবিদদের অনেক কিছু শেখার আছে। সংকটে সংগ্রামে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কীভাবে ধৈর্যহারা না হয়ে অবিচল থাকতে হয়, নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল থাকতে হয়, তার উদাহরণ তিনি।

হাছান মাহমুদ বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনায় গণতন্ত্রকে যেভাবে শিকল পরানো হয়েছিল, একজন শেখ হাসিনা না থাকলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা সম্ভবপর ছিল না। সেই সময় শেখ হাসিনার পাশে ছায়ার মতো ছিলেন জিল্লুর রহমান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘বর্তমানে টেলিভিশনের পর্দায়, পত্রিকার পাতায় আপনারা দেখেন সেই ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা প্রতিনিয়ত জাতিকে জ্ঞান দিতে থাকে। নাম বলে কাউকে খাটো করতে চাই না। তারা গত নির্বাচনের আগেও সক্রিয় হয়েছিল, আবার যদি কিছু করা যায়। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে বিএনপি-জামায়াতের অপশক্তি যেমন পরাজিত হয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের স্বপ্নও তেমন ধূলিস্যাৎ হয়েছে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, এখন ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা, যারা দেশের ওপর শকুন আহ্বান করে, তারা ঘাপটি মেরে আছে, যদি কোনো সুযোগ কোনো সময় পাওয়া যায় ছোবল মারার জন্য। সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে।

জিল্লুর রহমান পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।