বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) বহরে যুক্ত হওয়া নতুন ছয়টি ফেরিতে বড় কাভার্ড ভ্যান ওঠানামা করতে পারছে না। এগুলোর মাথা ফেরির ছাদে আটকে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ কথা বলেছেন।
ছয়টি ফেরিই মাঝারি আকারের (ইমপ্রুভড মিডিয়াম)। চিত্রা, ধানসিঁড়ি, বাইগার, গৌরী, কপোতাক্ষ ও মহানন্দা নামের এই ফেরিগুলো ঈদুল ফিতরের আগে ৪ থেকে ৭ এপ্রিলের মধ্যে চালু করা হয়।
প্রথম দুটি ফেরি আরিচা-কাজীরহাট পথে, তার পরের দুটি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পথে এবং শেষ দুটি ভোলা-লক্ষ্মীপুর পথে চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বড় কাভার্ড ভ্যান তো বটেই, অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে মালামালের স্তূপ উঁচু হয়ে গেলে সেগুলোও ওঠা-নামা করতে পারছে না।
বিআইডব্লিউটিসির জন্য একটি প্রকল্পের আওতায় এসব ফেরি সংগ্রহ করা হয়। ছয় ফেরি কেনার খরচ ১৩৯ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশের মতো টাকা দেওয়া হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে (ঢালু পথ) নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরিচা ফেরিঘাট সূত্র বলছে, এই ঘাটে থাকা চিত্রা ও ধানসিঁড়ি ফেরিতে ১৩ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার কাভার্ড ভ্যান ওঠা-নামা করতে পারে। এর চেয়ে বেশি উঁচু হলে সেগুলো ফেরির ছাদের নিচে আটকে যায়।
বিআইডব্লিউটিসির এই ছয়টির মতো বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল নামের একই ধরনের আরও দুটি ফেরি আছে বলে জানা গেছে। এই দুটি ফেরিতে কিন্তু ১৩ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার কাভার্ড ভ্যান উঠতে পারে বলে বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সংস্থার ৫৯টি ফেরি আছে। এর মধ্যে নতুন ছয়টি ফেরি ছাড়া অন্যগুলোতে এ ধরনের ‘সমস্যা’ নেই।
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরি বানানোর জন্য কিছু স্পেসিফিকেশন (সুনির্দিষ্ট চাহিদা) দেওয়া হয়েছিল যে উচ্চতা এত লাগবে। তা–ই করা হয়েছে। যে যানবাহন ওই ফেরিতে ঢুকবে না, সেটাতে তা যাবে না। আরেক ফেরিতে যাবে। এতে অসুবিধার কিছু নেই।’
নতুন ছয় ফেরিতে বড় কাভার্ড ভ্যান ওঠা-নামা করতে না পারার বিষয়টি সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির কনিষ্ঠ নির্মাণ প্রকৌশলী খন্দকার আবুল আহ্সান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা নকশাকারের সঙ্গে কথা বলেছি। এর সমাধান করব।’
খন্দকার আবুল আহ্সান আরও বলেন, নতুন ফেরিগুলোতে বড় যানবাহন আটকে যাওয়ার কারণ এগুলোর ছাদের কাঠামো নিচের দিকে বাড়ানো। বাড়তি কাঠামো ছয় ইঞ্চি কেটে কমানো সম্ভব। এতে ফেরির কাঠামোগত কোনো সমস্যা হবে না।
বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ফেরিগুলোতে যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড ঠিক করে দেবে বিনা পয়সায়। তারা এভাবে আগামী দুই বছর সেবা দেবে। উচ্চতার যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা–ও বিনা পয়সায় ঠিক করা হবে।
বিআইডব্লিউটিসির একটি সূত্র বলছে, নতুন ছয় ফেরির পানির নিচের অংশের গভীরতা (ড্রাফট) বেশি। সে কারণে নদীতে বেশি পানি ছাড়া সেগুলোর চলাচলে সমস্যা হয়। যেমন ভোলা-লক্ষ্মীপুর পথে জোয়ারের সময় ছাড়া কপোতাক্ষ ও মহানন্দা চলাচল করতে পারে না।
বিআইডব্লিউটিসির মুখ্য নৌ নির্মাতা মো. জিয়াউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ফেরিগুলো ডাবল বটম (দুটি তলবিশিষ্ট) হওয়ার কারণে ড্রাফট বেশি হয়েছে। কোনো কারণে একটি তল ফেটে পানি ঢুকলে তখন ফেরি যেন না ডোবে, সে জন্য দুটি তল দেওয়া হয়েছে।
জিয়াউল ইসলাম আরও বলেন, বেশি ভার নেওয়া হলে ফেরিগুলোর পানির নিচের অংশ আরও বেড়ে যাবে। তাই তাঁরা ভার আড়াই শ টনের মধ্যে রাখতে বলেছেন। তা ছাড়া ভোলায় বেশির ভাগ ফেরিই আটকে যায়। নদীতে জোয়ার এলে চলে।