খুন
খুন

একের পর এক স্বজনের হাতে কেন স্বজন খুন

ব্যবসার টাকা চাওয়ায় ভাগনে তাঁর মামা, মামি ও মামাতো বোনকে খুন করেছেন। স্বামী স্ত্রীকে, মা–বাবা সন্তানকে মেরে ফেলছেন। সন্তানের হাতেও খুন হচ্ছেন মা–বাবা। ভাই, বোনসহ নানা সম্পর্কের মানুষও একে অপরকে খুন করতে পিছপা হচ্ছেন না। স্বজনের হাতে স্বজনের খুনের এসব ঘটনার বেশির ভাগই ঘটছে বাড়িতে, ঘরের মধ্যে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন একাধিক ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশজুড়ে জোরালো আলোচনা তৈরি করেছে।

খুনের ঘটনার পর মামলার আসামিরা পুলিশের কাছে বা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ‘ঠান্ডা মাথায়’ ঘটানো খুনের কথা স্বীকার করছেন। দিচ্ছেন নৃশংস সেই ঘটনার বর্ণনা।

অপরাধ মনস্তত্ত্ব বিষয়ের শিক্ষক, মনোরোগ চিকিৎসক, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব খুনের পেছনে একক কোনো কারণকে দায়ী করা যাচ্ছে না। তবে পারিবারিক সম্পর্ক আলগা হয়ে যাওয়া, নৈতিক শিক্ষার অভাব, পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বাড়াসহ বিভিন্ন কারণ কাজ করছে এসব খুনের পেছনে।

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পারিবারিক শৃঙ্খলাবোধ নষ্ট হয়ে যাওয়া, পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাওয়া, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ বিভিন্ন কারণে পরিবারের ভেতরে স্বজনকে খুন করতেও অনেকে দ্বিধাবোধ করছেন না। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট এ ধরনের পরিস্থিতিকে উসকে দিচ্ছে।

পরিবারে স্বজনের হাতে খুনের ঘটনাগুলোকে সরলীকরণের কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব হতাশাগ্রস্ত মানুষ বা ঋণগ্রস্ত মানুষ পাওনাদের খুন করছেন না। যে ব্যক্তি খুন করছেন, তাঁর ব্যক্তিত্বের গড়নটা কেমন, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

‘খুনের ঘটনা সরলীকরণ করা কঠিন’

২ ফেব্রুয়ারি নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নে গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির বাইরে এসে ঢলে পড়েন আশিকুল হক মোল্লা (৪০)। তখন বাড়ির শোবার ঘরের বিছানায় তাঁর স্ত্রী তহুরা বেগম (৩০), দুই মেয়ে আয়েশা আক্তার (১১) ও যারিনের (৬) লাশ পড়ে ছিল। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার পর আশিকুল আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।

এ ঘটনায় তহুরা বেগমের ছোট ভাই মো. আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে আশিকুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আশিকুল। তাঁর বাড়ি ঘিরে মানুষের জটলার কারণে বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয়েছে গ্রাম পুলিশ।

ঘটনার পর কাঠ ও আসবাবপত্রের ব্যবসায়ী আশিকুলের স্বজনেরা জানান, আশিকুলের ব্যাংকে ১৮ লাখ টাকার ঋণ আছে। এ থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি এমন পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারেন।

গত ২৭ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। মামলার আসামি রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৫) হত্যার শিকার বিকাশ সরকারের (৪৫) আপন ভাগনে। গলা কেটে হত্যা করা অপর দুজন হলেন বিকাশের স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার এবং তাঁদের একমাত্র মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার। ২৯ জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে স্বজনদের উপস্থিতিতে তাড়াশ থানার পুলিশ ঘরের তালা ভেঙে এ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।

আসামি রাজীব স্নাতকোত্তর পাস। ব্যবসার পাশাপাশি মুঠোফোনে নানা ধরনের খেলার (অনলাইন জুয়া) সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে স্বজনদের কেউ কেউ জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার রাজীব জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বিকাশ সরকার ব্যবসার পুঁজি হিসেবে তাঁকে ২০ লাখ টাকা দেন।

ব্যবসা চলমান অবস্থায় তিনি মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন।

এরপরও চলতি বছর বিকাশ আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এ টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি মামার পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজীব পাওনা টাকা ফেরত দেবেন বলে মামার বাসায় যান। মামা তখন বাসায় ছিলেন না। মামির কাছে কফি খেতে চান। মামি কফির প্যাকেট কিনতে নিচে দোকানে যান। রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড বের করে মামাতো বোন পারমিতার মাথায় আঘাত করেন। মামি কফি কিনে বাসায় ফিরলে তাঁকেও একইভাবে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। পরে হাঁসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। মামা বাসায় ঢুকলে তাঁকেও প্রথমে লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন এবং পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

গত ১০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘লালমাটিয়ায় স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আটক’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর বলছে, রাজধানীর লালমাটিয়ায় গৃহবধূ তামান্না ইসলামকে (৩৪) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তামান্নার স্বামী হেলাল উদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ। হেলাল আবাসন নির্মাণ ব্যবসায়ী। তামান্না মেঝেতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে প্রচার করেন হেলাল। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তামান্নার মাথায় কোপের চিহ্ন দেখতে পান। এই দম্পতির পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে রয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, তামান্নার স্বামী হেলালের আবাসন ব্যবসায় মন্দা চলছিল। এ নিয়ে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। তাই তিনি স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে চেয়েছিলেন।

শুধু এ তিন ঘটনা নয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ ধরনের আরও কয়েকটি ঘটনা প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়েছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক (চাইল্ড, অ্যাডলোসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি) হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারে স্বজনের হাতে খুনের ঘটনাগুলোকে সরলীকরণের কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব হতাশাগ্রস্ত মানুষ বা ঋণগ্রস্ত মানুষ পাওনাদের খুন করছেন না। যে ব্যক্তি খুন করছেন, তাঁর ব্যক্তিত্বের গড়নটা কেমন, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মানুষের মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তি বহমান। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, সামাজিকীকরণসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে সভ্য প্রমাণ করে। কেউ শৈশবে পারিবারিক সহিংসতা দেখে বড় হলে, শিশুর বিকাশের পর্যায়ে ত্রুটি থাকলে ওই ব্যক্তি বড় হয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।

আচরণগত ত্রুটির জন্যও কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে উল্লেখ করেন হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, অন্যকে দেখে, গণমাধ্যমে এ ধরনের খবর পড়ে কেউ উৎসাহিত হতে পারেন একই ধরনের ঘটনা ঘটাতে। অর্থাৎ তিনিও একইভাবে সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করেন। আবার কারও ক্ষেত্রে আকস্মিক প্রবণতার জন্যও আবেগের উত্তেজনায় এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন।

হতাশা, মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া, মাদকাসক্তি, পরকীয়াসহ বিভিন্ন কারণে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে। পরিবারের ভেতরে স্বজনের হাতে খুনের ঘটনাগুলোর পেছনে একেকটি ঘটনায় একেকটি কারণ সামনে আসে। আবার অনেক ঘটনার কারণ অজানাই থাকছে। তবে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা একটি বড় কারণ।
ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঘটছে একের পর এক ঘটনা

গত ১৬ জানুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৬ বছরের আফরিনকে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করেন তাঁর সৎমা ফুলি খাতুন (২৬)। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর আফরিন বাবা ও সৎমায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকছিল। আফরিনের মা বড় মেয়েকে নিয়ে থাকতেন যশোরে।

গত ৬ জানুয়ারি নিজেদের বাসার পাশের একটি পানির ট্যাংক থেকে আফরিনকে অচেতন অবস্থায় তোলা হয়। এ ঘটনায় ১২ জানুয়ারি রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন আফরিনের মা সোনিয়া খাতুন (২৫)। ফুলি খাতুনকে গ্রেপ্তার করে কাফরুল থানার পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

কাফরুল থানা-পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, ঘটনার দিন সোহাগ (৩৫) নামের ফুলির এক ফুফাতো ভাই বাসায় এলে ফুলি খাতুনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে আফরিন। সে তার বাবা এলে সব বলে দেবে বলেছিল। পরে সোহাগের পরামর্শে পাশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আফরিনকে ট্যাংকে ফেলে দেন ফুলি খাতুন।

নড়াইলের টিটো মোল্লার দেড় ও আট বছর বয়সী দুই মেয়ে মারা গেছে। মেজ মেয়ের শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। তাঁর স্ত্রী শারীরিকভাবে শঙ্কামুক্ত হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ‘নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে’ তাঁর স্ত্রী পলি বেগম তিন সন্তানকে বিষপান করিয়ে নিজেও পান করেছিলেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা এটি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে পলি বেগমের বিয়ে হয়। চাকরিসূত্রে স্বামী বাইরে থাকায় বিয়ের পর থেকেই তাঁর শাশুড়ি তাঁকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন। স্বামীকে বলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ খেয়েছিলেন।

২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরে ঘুমন্ত দুই সন্তানকে ঘরের দরজা বন্ধ করে আগুন দিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় অভিযুক্ত কামাল হোসেন (৪০) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

জবানবন্দি অনুযায়ী, স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই ঘরে আগুন দিয়ে দুই সন্তান আবদুর রহমান (৩) ও আয়েশা আক্তারকে মেরে ফেলেন তিনি। এ ঘটনায় অটোরিকশাচালক কামাল হোসেনের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারও গুরুতর দগ্ধ হন।

গত ৫ জানুয়ারি প্রথম আলোর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘তালাবদ্ধ ঘর থেকে শিশুর পোড়া লাশ উদ্ধার, “মাদকাসক্ত” বাবা আটক’। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া আলিফ হোসেনের (৮) পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর শিশুকে ঘরে রেখে আগুন দেওয়ার অভিযোগে শিশুটির বাবা ইয়াসিন আলীকে আটক করে পুলিশ।

ইয়াসিন মাদকাসক্ত বলে তাঁর বাবাসহ স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে। ইয়াসিনের বাবা নূর ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর ছেলের সঙ্গে রাগ করে নাতি আলিফকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন বউমা। ইয়াসিন মিথ্যা কথা বলে আলিফকে বাড়ি নিয়ে আসেন। ভোরের দিকে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে কেরোসিন ঢেলে ছেলের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পাশে উচ্চ স্বরে গান ছেড়ে ঘরের তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান ইয়াসিন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবারের ভেতরে শিশুর সামাজিক যে বিকাশ, তা সুষম হতে হবে। শিশু যাতে অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে পারে, সেভাবে শিশুকে বড় করতে হবে। আর যে ঘটনাগুলো ঘটছে, গণমাধ্যমে তার প্রকাশ ও প্রচার অবশ্যই করতে হবে। তবে হত্যা, আত্মহত্যার মতো ঘটনার বর্ণনা গণমাধ্যমে যাতে নির্মোহ হয়, আবেগ কম থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

২ ফেব্রুয়ারি ‘বেওয়ারিশ হিসেবে শিশুর লাশ দাফনের খবরে ছুটে এলেন মা, বাবার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা’, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ‘অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে খুনের মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ’, একই বছরের ৪ নভেম্বর ‘স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ জামাতার বিরুদ্ধে’, ৮ নভেম্বর ‘থানায় গিয়ে স্বামী বললেন, স্ত্রীকে ছুরি মেরে এসেছি’, ১৫ নভেম্বর ‘বোনের চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ, ভাই আটক’, ১৬ নভেম্বর ‘জুতা রাখা নিয়ে ঝগড়ার জেরে ভাইকে পিটিয়ে হত্যা’, ২২ নভেম্বর ‘জয়পুরহাটে ছেলের কুড়ালের আঘাতে প্রাণ গেল বাবার’ শিরোনামের বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) পুলিশ সুপার ইনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহের জন্য পরিবারের ভেতরে বিভিন্ন খুনের ঘটনা ঘটছে। সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া এ ধরনের ঘটনা বেড়েছে, তা বলা যাবে না।

মাঠপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সভা-সেমিনার করে জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। ঘটনা ঘটে গেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দূর করার পরামর্শ

সমাজবিজ্ঞানী, মনোরোগ চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সমাজে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পারিবারিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, হতাশা, মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া, মাদকাসক্তি, পরকীয়াসহ বিভিন্ন কারণে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে। পরিবারের ভেতরে স্বজনের হাতে খুনের ঘটনাগুলোর পেছনে একেকটি ঘটনায় একেকটি কারণ সামনে আসে। আবার অনেক ঘটনার কারণ অজানাই থাকছে। তবে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা একটি বড় কারণ। স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়াও অনেক ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

পরিবারের সদস্যরা কোনো জায়গায় বেড়াতে গেলেও দেখা যাচ্ছে সবাই মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত। একসঙ্গে থেকেও তাঁরা বিচ্ছিন্ন। তাই পারিবারিক সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

চাকরি চলে গেলে বা বেকারত্বের ক্ষেত্রে বিকল্প পেশা খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ফাতেমা রেজিনা ইকবাল। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মন্দায় নিত্যনতুন দামি পোশাক কিনতে হবে, বছরে একবার বিদেশে বেড়াতে যেতেই হবে—এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা থাকলে তাতেও রাশ টানতে হবে। মোটকথা, জীবনযাপনের ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে।