মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা) ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর সি মজুমদার মিলনায়তনে। ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা)  ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর সি মজুমদার মিলনায়তনে। ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর

এম এন লারমার জন্মদিন

পার্বত্য চুক্তি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের সুযোগ এসেছে

স্বাধীনতার প্রায় ২৫ বছর পরে পার্বত্য চুক্তি হয়। এরপর আরও ২৫ বছর পার হয়েছে অথচ তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন পরিস্থিতিতে পার্বত্য চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন ও সংবিধান সংস্কার করে সব জনগোষ্ঠীর সমতাভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা) ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এই আলোচনা আলোচনার আয়োজন করে এম এন লারমা জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ। প্রবন্ধে তিনি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বিভিন্ন সময়ের সংস্কার প্রস্তাব, তাঁর উন্নয়ন, নারী, কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক ধারণা এবং বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এখন নতুন পরিস্থিতিতে সংবিধানের এই অসংগতিগুলো দূর করার সুযোগ এসেছে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, যে অধিকারগুলো ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়েছে, তার যেন ব্যত্যয় না ঘটে। তিনি পার্বত্য চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, স্বাধীনতার প্রায় ২৫ বছর পরে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং আরও ২৫ বছর পার হয়েছে অথচ তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তির পরে তা বাস্তবায়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এখন এই চুক্তি বাস্তবায়ন করার উপযুক্ত সময়।

লেখক ও বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, এম এন লারমা প্রচলিত রাজনীতির ভেতর দিয়েই পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্র সংস্কার চিন্তার অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। এখন সাংবিধানিক সংস্কারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেখানে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের পাশাপাশি পাহাড় ও সমতলের আন্দোলনরত সাধারণ মানুষেরও মতামত গ্রহণ করতে হবে। তাঁদেরও অংশগ্রহণ থাকা প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা দূরদর্শী রাজনীতিক ছিলেন। তিনি সাংবিধানিক সম–অধিকার, জনগণের ক্ষমতায়ন, মানব উন্নয়নসহ এমন অনেক বিষয়ে ৪০ বছর আগে যে বিষয়গুলো নিয়ে ভেবেছেন, কথা বলেছেন, সেই বিষয়গুলো এখন নতুন করে উপস্থাপিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সমাজের ভেতরে বিভাজন জিইয়ে রেখে প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারে না। সব বিভাজন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধেই এবার তরুণ প্রজন্ম অভ্যুত্থান করেছে। এখন এসবের অবসান ঘটাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কোনো আঞ্চলিক নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন জাতীয় নেতা। তাঁকে আমাদের সেই সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের সকল অধিবাসী মিলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার যে সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে, তা যেন আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন লেখক সারোয়ার তুষার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ছাত্র-যুববিষয়ক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সতেজ চাকমা।