মিয়ানমারের পরিস্থিতি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা উসকে দিতে পারে

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের জেরে বাংলাদেশের ঘুমঘুম সীমান্তের অবনতিশীল পরিস্থিতি আসিয়ানভুক্ত সাত দেশের কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম
ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের চলমান সংকট আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো। আসিয়ানভুক্ত দেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য মিয়ানমারই দায়ী। ইয়াঙ্গুনের পদক্ষেপের ওপর দেশটির শান্তি ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে।

আজ সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে আসিয়ানভুক্ত দেশের শীর্ষ কূটনীতিকেরা এমন অভিমত দিয়েছেন। আসিয়ান ১০ দেশের জোট হলেও ঢাকায় লাওস ও কম্বোডিয়া ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনেই, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার এই আট দেশের মিশন রয়েছে। আজকের ব্রিফিংয়ে মিয়ানমার ছাড়া অন্য সাত দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের জেরে বাংলাদেশের ঘুমঘুম সীমান্তের অবনতিশীল পরিস্থিতি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।

কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে কিছু জানানো হয়নি। তবে সন্ধ্যায় দুই পক্ষের আলোচনায় উপস্থিত কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানায়, কূটনীতিকদের কাছে সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে গত আগস্ট মাস থেকে বেশ কয়েক দফায় মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারের শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছে। সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে গত শুক্রবার এক রোহিঙ্গা কিশোর এবং অন্য পাঁচজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আকাশসীমা লঙ্ঘন করে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে। সব মিলিয়ে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতির জের ধরে এক মাসে চারবার তলব করা হয়েছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসিয়ানসহ বিশ্ববাসীর সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের জেরে বাংলাদেশের ঘুমঘুম সীমান্তের অবনতিশীল পরিস্থিতি আসিয়ানভুক্ত সাত দেশের কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম

বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আসিয়ান সদস্যদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল, জানতে চাইলে একটি সূত্র জানায়, কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। এরপর আসিয়ানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশ আলাদাভাবে বলেছে, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সঠিক পথেই রয়েছে।

এ সময় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কূটনীতিকেরা বলেন, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে মিয়ানমারকে অনেক বোঝানো হয়েছে। এ জন্য আসিয়ান পাঁচ দফা সুপারিশ করেছিল। মিয়ানমার এসব সুপারিশ উপেক্ষা করেছে। এ জন্য মিয়ানমারকে নিয়ে তাঁরা হতাশ। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধান না হওয়ায় আসিয়ানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কারও কারও প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার নিজেই যদি সমস্যার সমাধান না চায়, সেখানে আসিয়ানের কী করার আছে।

আঞ্চলিক শান্তি ও অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অন্য একটি সূত্র জানায়, আসিয়ানভুক্ত একটি দেশের পার্লামেন্টের আলোচনায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের জেরে পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে। এ বিষয়টি গতকালের ব্রিফিংয়ে এসেছিল।

গত বছর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছরের এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর উদ্যোগে জাকার্তায় আসিয়ানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে পাঁচ দফার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং উপস্থিত ছিলেন।

আজ ব্রিফিংয়ে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত কয়েকটি দেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে মিয়ানমারের চলমান সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বিশেষ করে আসিয়ানের পাঁচ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি মিয়ানমারের অসহযোগিতার কারণে। এমন এক প্রেক্ষাপটে সাধারণ পরিষদে কয়েকটি দেশ মিয়ানমার নিয়ে নিজেদের জোরালো অবস্থানের কথা জানাবে বলে ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেছে।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘আসিয়ানের দেশগুলোর কূটনীতিকদের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছি। আমরা তো পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গা সংকটে জর্জরিত। নতুন করে তাদের গোলাগুলির কারণে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশ সব সময় যেকোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।’

এদিকে রাখাইনের সংঘাতের জেরে বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সরকার আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে আসিয়ান ছাড়া বিদেশি অন্য মিশনগুলোর রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করবে।