বিশ্ববাজার

জ্বালানি তেলের দাম ৯০ ডলারের নিচে

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৯০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় অয়েল প্রাইস ডটকমের তথ্যানুসারে, প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৮৮ দশমিক শূন্য ৩ ডলার। ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ৮১ ডলার।

অথচ আগের দিনই ওপেক ও সহযোগী সদস্যদেশগুলো ঘোষণা দিয়েছিল, তেলের দাম হ্রাস ঠেকাতে তারা উৎপাদন আরও হ্রাস করবে। খবর সিএনএনের।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূলত দুটি কারণে তেলের দাম নিম্নমুখী। প্রথমত, বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা মোটেও ভালো নয়। উন্নত দেশগুলোতে মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই তেলের চাহিদা কমছে। দ্বিতীয়ত, ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দর। ডলার প্রাইস ইনডেক্সের তথ্যানুসারে, চলতি বছর ডলারের দর ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলারের দর বাড়লে আমদানি মূল্য বেড়ে যায়, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করে। সে জন্য ডলারের দর বাড়লে উন্নয়নশীল দেশগুলো জ্বালানি তেল আমদানি হ্রাস করে, বাংলাদেশও যা করেছে। ডলার বাঁচাতে দেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারের অবস্থান হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম না কমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস করা হবে।

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। গত ৫ আগস্ট রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দিন মধ্যরাত থেকে নতুন দর কার্যকর করা হয়। এর পর থেকেই বাস, ট্রাক, অ্যাপের প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, লঞ্চ ও হিউম্যান হলারের ভাড়া বেড়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে তা আরও একদফা বাড়ে।

সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য বলে আসছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কাছুটা কমলে দেশের বাজারে লিটারে পাঁচ টাকা কমানো হয়।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবারও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে দাম কমছে, তাতে শিগগিরই দেশের বাজারেও দাম কমবে।

মন্দাভাবের কারণে বিশ্ববাজারে দাম কমার ধারা কত দিন অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ আছে। বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, দাম কমতে থাকলে ওপেক তেল উত্তোলন আরও হ্রাস করবে। এতে দাম খুব একটা না-ও কমতে পারে।