প্রথম আলোর রজতজয়ন্তীতে আনন্দঘন সন্ধ্যায় সমবেত হয়েছিলেন সমাজের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা।
প্রথম আলো গত ২৫ বছরে বহু চড়াই–উতরাই পেরিয়ে এল। এই দীর্ঘ পথযাত্রায় যেসব সহযোগী, শুভানুধ্যায়ী পাশে ছিলেন; নানাভাবে প্রেরণা দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন, জানিয়েছেন সম্প্রীতি; তাঁদের নিয়েই আয়োজিত হলো এক উষ্ণ সুধী সমাবেশ।
গতকাল শুক্রবার বৃষ্টিভেজা দিনের শেষে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে এই সুধী সমাবেশে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, জনগণের স্বপ্ন আর অদম্য মনোবলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। ‘হারবে না বাংলাদেশ’—রজতজয়ন্তীর এই স্লোগান নিয়ে অতীতের মতোই প্রথম আলো বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় মানুষের পাশে থাকবে।
গতকাল সন্ধ্যায় এই আনন্দঘন আয়োজনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল সংগীতজ্ঞ মানাম আহমেদের পরিচালনায় সমবেত যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা দিয়ে। এতে অংশ নেন পল্লব সান্যাল, কামরুল আহমেদ, সালাহউদ্দিন মাহমুদ, জ্যোতি ব্যানার্জি, মনিক আহমেদ, সোহেল মোহাম্মদ ও শেখ জসিম।
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে এই আয়োজন হয়ে উঠেছিল মর্যাদামণ্ডিত। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মন্ত্রী, রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা, নারীনেত্রী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদসহ অনেকে।
মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে বলরুমের লবিতে ছিল চা-কফির ব্যবস্থা আর ছবি তোলার জন্য লালগালিচা পাতা মঞ্চ। অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। অনেকেই রজতজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানাতে পুষ্পস্তবক নিয়ে এসেছিলেন। মঞ্চে ছবি তোলার পাশাপাশি তাঁরা সম্পাদক মতিউর রহমানের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, রামেন্দু মজুমদার, রাশেদ খান মেনন, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রফিকুন নবী, আলী ইমাম মজুমদার, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দিন আহমেদ, এ এফ হাসান আরিফ, সারওয়ার আলী, মফিদুল হক। ব্যবসায়ী নেতা আনিস উদ দৌলা, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, মাহবুবুর রহমান ও এ কে আজাদ। ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জামান, গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধূরী, হামিদা হোসেন, পারভীন হাসান, শিরিন হক, ফওজিয়া মোসলেম, মালেকা বেগম, আইরিন খান, ফারাহ কবির। এম সাখাওয়াত হোসেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান। মেয়র আতিকুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, রুমিন ফারহানা। সারা যাকের, জুয়েল আইচ, সাংবাদিক নূরুল কবীর। মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ; সংগীতশিল্পী নকিব খান ও অদিতি মহসিন। অভিনয়শিল্পী সুচন্দা, চম্পা, জয়া আহসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আজমেরী হক বাঁধন প্রমুখ।
বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙ্গেল, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হেলেন লাফাভ ও চীনের উপরাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান প্রমুখ।
অতিথিরা আসতে শুরু করেছিলেন সন্ধ্যা সাতটা থেকে। তাঁরা চা-কফি পানের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মগ্ন হয়ে ওঠেন।
মঞ্চের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল রাত আটটায়। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক অতিথিদের সম্ভাষণ জানান। প্রথম আলো গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার অনেক ঘটনা এবং হার না মানা বহু অদম্য মানুষের কঠিন জীবনসংগ্রাম ও জয়ের কাহিনি তুলে ধরেছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মানুষ সেখানকার একটি সড়কের নাম রেখেছে ‘প্রথম আলো সড়ক’। বাধা–প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফল হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে থেকে লিমন হোসেন, মাসুদা আক্তার ও সিনথিয়া খন্দকারের কাহিনি নিয়েই এবার ছিল রজতজয়ন্তীর প্রামাণ্যচিত্র। যন্ত্রসংগীতের পরে প্রামাণ্যচিত্রটি দেখানো হয়।
এরপর মঞ্চে আসেন লিমন হোসেন, মাসুদা আক্তার, সিনথিয়া খন্দকার ও প্রথম আলোর ঝিনাইদহের নিজস্ব প্রতিবেদক আজাদ রহমান। সিনথিয়া থাকেন প্যারিসে। তিনি ফরাসি ভাষায় ও ইংরেজিতে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘জীবন পরাজিত হয় না।’ সম্পাদক মতিউর রহমান মঞ্চে এসে তাঁদের শুভেচ্ছা জানান।
রজতজয়ন্তীর বক্তব্যে মতিউর রহমান সমবেত সুধীজন, প্রথম আলোর পাঠক, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পৃথিবী এখন এক কঠিন সময় পার করছে। অর্থনীতিতে সংকট, রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা। তবু আমাদের বিশ্বাস, মানুষ এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। প্রামাণ্যচিত্রে যে সাহসী মানুষদের দেখলাম, তাঁরা তাঁদের মনের জোরে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাঁদের পাশে ছিলাম। এই হার না মানা মানুষের পাশে আমরা থাকব।’
এরপর প্রদান করা হয় সাংবাদিকতায় লতিফুর রহমান পুরস্কার। এবার এই পুরস্কার পেয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল। এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই পুরস্কার দেওয়া হলো। শিশির মোড়লের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মিডিয়াস্টার লিমিটেড ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান।
সিমিন রহমান বলেন, ‘প্রথম আলো তার বস্তুনিষ্ঠতার মূল্যবোধ অব্যাহত রেখে ভবিষ্যতেও সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করে যাবে। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের প্রত্যাশা ছিল, প্রথম আলো দেশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার একটি অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। শতাব্দী অতিক্রম করবে। আমরা আশা করি, প্রথম আলো সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।’
এর পরে ছিল একটি গান, ‘এই তো আকাশ স্বপ্নময়/ পথ হারানোর কিসের ভয়।’ তোফায়েল আহমেদের কথা ও ইমন চৌধুরীর সংগীত আয়োজনে গানটি গেয়েছেন সানিয়া সুলতানা, অবন্তি সিঁথি, আতিয়া আনিসা, মাহতিম সাকিব, অয়ন চাকলাদার ও তানজিব সারওয়ার। গানের পরে নৈশভোজ; সেখানে অংশ নিতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানোর ভেতর দিয়ে শেষ হয় সুধী সমাবেশ।