যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) প্রভাষক পদে নিয়োগ আটকে গেছে এক প্রার্থীর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ওই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর প্রভাষক হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। জাহাঙ্গীরনগরে তাঁর বিভাগেরই সাবেক এক ছাত্রী সোমবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে অভিযোগ করার পর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর বোর্ড অব গভর্ন্যান্স (বিজি) ওই শিক্ষকের নিয়োগ আটকে দেয়।
বোর্ড অব গভর্ন্যান্স আইবিএর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সোমবার বিকেল তিনটায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে এই ফোরামের সভায় অভিযুক্ত শিক্ষকের নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছারের সভাপতিত্বে নিয়োগ বোর্ডের সভায় ওই শিক্ষকসহ চারজনকে আইবিএর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, অভিযোগের পক্ষে সব তথ্যপ্রমাণ তাঁর কাছে আছে। মূলত ওই শিক্ষকের যৌন হয়রানির কারণে তিনি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করতে পারেননি। স্নাতকের শেষ সেমিস্টার থেকেই ওই শিক্ষক তাঁকে হয়রানি শুরু করেন। এর ফলে তাঁর শেষ সেমিস্টারের ফলও ভালো হয়নি।
এর আগে গত ২৩ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। এর পরদিন ওই শিক্ষক ছাত্রীর বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন৷ পরে সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৫০ লাখ টাকার মানহানির মামলা করেছেন।
বিকেলে আইবিএর বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের সভায় প্রভাষক পদে ওই শিক্ষকের নিয়োগ আটকে দেওয়ার পাশাপাশি বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছারের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন নিয়োগ বোর্ড যখন ওই প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখনো ছাত্রীর ওই অভিযোগটি আসেনি৷ পরে অভিযোগ আসায় আইবিএর বোর্ড অব গভর্ন্যান্স বিষয়টির অনুমোদন না দিয়ে রিভিউর জন্য পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখব। এরপর আবার বিষয়টি বোর্ড অব গভর্ন্যান্সে যাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রায় আট বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এর চার বছর পর পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হন। গত ৬ বছরে তিন দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষক হওয়ার আবেদন করে একাডেমিক ফলাফলের কারণে ব্যর্থ হন তিনি।